খাদ্যনালির ক্ষতি পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি ৭৬% বৃদ্ধি করে

খাদ্যনালির ক্ষতি পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি ৭৬% বৃদ্ধি করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মানসিক চাপ, উদ্বেগ, খারাপ চিন্তা, ক্লান্তি, মেজাজের হেরফের থেকে স্নায়ুর জটিল রোগ পার্কিনসন্সের সূত্রপাত। তথ্য অনুসারে সারা বিশ্ব জুড়ে এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গবেষকদের মতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোশে তার প্রভাব পড়ে। ফলে, স্নায়বিক রোগটির ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে হাত-পা কাঁপার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যত দিন যায় ততই তা বাড়তে থাকে। একসময় দৈনন্দিন কাজকর্ম করাও কঠিন হয়ে পড়ে। জামা নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে পারকিনসন্স রোগ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করার আগে অন্ত্রে তার প্রভাব ফেলে। আমরা অনেকসময় ভাবি আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে আমাদের অন্ত্রকে প্রভাবিত করে। কিন্তু অন্ত্র যে মস্তিষ্কের উপর খুব বড়ো প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ চিকিৎসাশাস্ত্রে নেই। এবং গবেষকরা তা সবেমাত্র বুঝতে শুরু করেছেন। অনেক ব্যক্তি যারা পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত তারা বহু বছর আগে থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা বমিভাবের মতো উপসর্গগুলো অনুভব করতে শুরু করেন। তারপর কয়েক দশক বাদে তাদের মধ্যে হাঁটার অসুবিধা বা হাত কাঁপার মতো মোটর স্নায়ু সংক্রান্ত লক্ষণগুলো শুরু হতে দেখা যায়। এই গবেষণায় গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেছেন পারকিনসন্স কীভাবে আমাদের অন্ত্রকে প্রথম প্রভাবিত করে। গবেষণার ফলাফল চিকিত্সা কৌশলগুলো এক নতুন পথে পরিচালিত করবে বলে গবেষকদের অনুমান। পারকিনসন্স রোগটি এক ধরনের নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার। বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৮.৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত যা গত তিন দশকে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষায় এই “গাট-ফার্স্ট হাইপোথিসিস” অন্বেষণ করতে, গবেষকরা বিভিন্ন হেলথ সেন্টার, বহিরাগত ক্লিনিক এবং কমিউনিটি হাসপাতাল থেকে রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে কোহর্ট স্টাডি করেন। গবেষকরা পারকিনসন্স রোগের কোনো ইতিহাস নেই এমন রোগীদের একটি দল চিহ্নিত করেন এবং তাদের উপর কিছু পরীক্ষা করেন। খাদ্যনালীর উপরের অংশ বা আপার জিআই ট্র্যাক্টের আস্তরণে আঘাতকে ডাক্তারি পরিভাষায় মিউকোসাল ড্যামেজ বলা হয়। এই রকম ২৩৩৮ জন রোগীর মধ্যে ২.২% পরবর্তী ক্ষেত্রে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্যদিকে মিউকোসাল ড্যামেজে হয়নি এমন ৮৯৯৫ জন রোগীর মধ্যে মাত্র ০.৫% পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে সব রোগীদের মিউকোসাল ক্ষতি রয়েছে তাদের অন্যদের তুলনায় পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৭৬% বেশি ছিল। গড়ে, মিউকোসাল স্তরে ক্ষতি শনাক্ত হওয়ার ১৪.২ বছর পর পারকিনসন্স রোগ নির্ণয় করা হয়েছিল। গবেষকদের মতে এই রোগীদের ভবিষ্যতে পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে।