খাদ্য নিরাপত্তা ও পরাগবাহী কীটপতঙ্গ

খাদ্য নিরাপত্তা ও পরাগবাহী কীটপতঙ্গ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জুলাই, ২০২৫

কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অ্যাভোকাডো (মাখনফল) বাগানের পাশে সংরক্ষিত স্থানীয় গাছপালা কেবল প্রকৃতির শোভা বাড়ায় না, বরং তা কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরাগবাহী পোকামাকড়ের জীবন রক্ষা করে। এই পোকামাকড়গুলো ফুল ফোটার সময় পাশের স্থানীয় গাছপালা থেকে খাদ্য বা পরাগ সংগ্রহ করতে পারে, যা তাদের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
দেখা গেছে, খালি কিংবা বালি ভর্তি জমির তুলনায় যেসব অ্যাভোকাডো বাগিচার পাশে স্থানীয় গাছপালা রয়েছে, সেসব এলাকায় পোকামাকড় দ্বিগুণ পরিমাণ উদ্ভিদের পরাগ সংগ্রহ করতে পারছে। ফলে পোকামাকড়ের খাদ্যের বৈচিত্র্য বাড়ছে এবং তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ছে।
পরাগযোগ উদ্ভিদের প্রজননের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বাহকগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই পরাগবাহী কীট। পতঙ্গ। এর মাধ্যমে ফুলের পরাগরেণু গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয় এবং নতুন বীজ উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হতে পারে, যা তাদের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে। পরাগযোগ ছাড়া ফল, সবজি এবং অন্যান্য শস্য উৎপাদন সম্ভব নয়। এই পরাগযোগের মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে পরাগবাহী পতঙ্গরা। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ বিলিয়ন মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে কৃষি উৎপাদন ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। তাই নির্বিচারে গাছ কেটে এই কীটপতঙ্গগুলোর আশ্রয় কেড়ে নিলে চলবে না।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ড. জোশুয়া কেস্টেল জানান, এত বৃহৎ পরিসরে পোকামাকড়ের মাধ্যমে সংগৃহীত পরাগের বৈচিত্র্য পরিমাপ করা এতদিন কঠিন ছিল। কিন্তু কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত আধুনিক পরিবেশগত ডিএনএ মেটাবারকোডিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিশাল তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এই পদ্ধতিতে জল, মাটি বা অন্য পরিবেশে প্রাণীদের পড়ে থাকা ক্ষুদ্র ডিএনএ অংশবিশেষ যেমন: ত্বক, লালা, মল, মৃত কোষ সংগ্রহ করা হয়। তারপর এগুলোর দ্রুত শনাক্তকরণ এবং শ্রেণিবিন্যাসের জন্য বিশেষ বারকোডের মতো জিনগত নির্দেশক ব্যবহার করা হয়। পোকামাকড় সংগ্রহের ফাঁদ থেকে সংগৃহীত নমুনার মধ্যে থাকা পরাগের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, কী পরিমাণ এবং কী ধরণের গাছপালা পোকামাকড় ব্যবহার করছে।
সহ-গবেষক পল নেভিল জানান, বিশ্বব্যাপী কৃষি ফসলের ৭৫ শতাংশই পোকামাকড়ের মাধ্যমে পরাগায়নের উপর নির্ভরশীল। অথচ অনেক প্রজাতির পোকামাকড় বিলুপ্তির পথে। শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই প্রায় ৩,২০,০০০ পোকামাকড় প্রজাতির মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে।

গবেষকদলের সুপারিশ অনুযায়ী, কৃষিজমিতে নিয়মিত জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ চালু করা, প্রাকৃতিক গাছপালা সংরক্ষণ করা এবং খালি জমি পুনরায় গাছপালা দিয়ে ভরাট করা অত্যন্ত জরুরি। এতে শুধু যে অ্যাভোকাডোর মতো ফসল রক্ষা পাবে তাই নয়, বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তাও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − four =