খাবারের প্রভাব পড়ে মনে

খাবারের প্রভাব পড়ে মনে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ আগষ্ট, ২০২৪

খাবার আর মন, দুইয়ের সম্পর্ক পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। ভালো কিছু ঘটলেই আমরা মিষ্টি মুখ করে থাকি। মিষ্টি খেলে মন ভালো হয়ে যায়। আমাদের মেজাজের উপর মিষ্টি খাবারের একটা ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে ইংরেজিতে একটা কথা সম্প্রতি প্রচলিত- “হ্যাংরি” যেখানে খিদে মানুষের রাগ বা বিরক্তির উদ্রেক করে। সোজা কথায় খাবারের রকমফের বা খাদ্যাভ্যাস আমাদের মনের উপর প্রভাব ফেলে। কিছু খাবার আছে যা আমাদের মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। আবার কয়েকটি খাবার মেজাজ পরিবর্তন বা হতাশার কারণ হয়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে রক্তে শর্করার ওঠানামা আংশিকভাবে আমাদের খাবার ও আমাদের অনুভূতির মধ্যে সংযোগের জন্য দায়ী। হরমোন নিঃসরণ এবং আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর এর প্রভাবের মাধ্যমে, রক্তে শর্করার মাত্রা উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার ক্ষেত্রে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে।
মানসিক স্বাস্থ্য বেশ জটিল একটা ক্ষেত্র। গবেষণায় প্রমাণিত খাদ্যাভ্যাস মানুষের— বিশেষ করে মহিলাদের— মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তাই বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। খাবারে পুষ্টি বা প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে তাই প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাবার। আমরা যতবার শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট যেমন রুটি, ভাত, পাস্তা, আলু খাই, আমাদের রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পায় এবং হরমোন ও কিছু সংকেত অণুর নিঃসরণ হয়। যেমন, ডোপামিন – আমাদের মস্তিষ্কের আনন্দ সংকেত – মিষ্টি খাবার খাওয়ার পর আমরা আনন্দিত হই। ইনসুলিন হল আরেকটি হরমোন যা কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করার কারণে নিসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হল আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো। এটি শরীরের শর্করাকে কোশ এবং কলাতে পৌঁছে দেয় যেখানে তা শক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। আমরা খুব বেশি পরিমাণে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট খেলে আমাদের রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি হয় ফলে ইনসুলিনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ইনসুলিন ব্লাড সুগারের মাত্রা কমায়। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে অ্যাড্রেনালিন এবং নরড্রেনালাইন নিঃসরণ শুরু হয়। এই দুটি হরমোনই রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। এটি আমাদের অনুভূতি- উদ্বেগ, ভয় বা আগ্রাসনকে প্রভাবিত করে। কিন্তু মজার বিষয় হল, শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পরে অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার সময়, ডোপামিন আমাদের স্বল্পমেয়াদে ভালো অনুভব করালেও পরে অ্যাড্রেনালিন আমাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে সবাই সমানভাবে প্রভাবিত হয় না। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ভিন্ন। লিঙ্গ, জিনগত কারণ, এক জায়গায় বসে থাকা, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের উপর তা নির্ভর করে। আর মনে রাখতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য জটিল। তাই নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, কোনো ধরনের খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন, সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলোকে ছাপিয়ে একজনের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করতে পারে না। মান্সিক স্বাস্থ্য পরিচালিত হয় ব্রেনের মাধ্যমে, মস্তিষ্কের মধ্যেকার নিউরোট্রান্সমিটারস দ্বারা। আর এই নিউরোট্রান্সমিটারস কতটা ভারসাম্য রেখে কাজ করবে, তা নির্ভর করে আমরা কী খাচ্ছি, তা হজম হচ্ছে কিনা, তার উপরে। তাই সাধারণ ভাবে যেটা মনে করা হয়, তা হল স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা খুব জরুরি। ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদির মধ্যে থাকা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস শরীর ও মনের জন্য খুবই দরকারি।