খিদে নিয়ন্ত্রণের ‘ সুইচ’

খিদে নিয়ন্ত্রণের ‘ সুইচ’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ অক্টোবর, ২০২৫

মানবদেহে খাবারের চাহিদা ও স্নেহ অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের জটিল সংকেতকোষের মাধ্যমে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা BNC2 নামে চিহ্নিত একটি নতুন প্রকার স্নায়ুকোষ আবিষ্কার করেছেন। এটি দ্রুত কাজ করে ক্ষুধা সংকেতকে দমন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল স্নায়ুবিজ্ঞানীর এই গবেষণা, খাদ্যগ্রহণের নিয়ন্ত্রণ ও স্থূলতার চিকিৎসা পদ্ধতিতে নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা জানতেন, মস্তিষ্কের একটি অংশ, আর্কুয়েট নিউক্লিয়াস, আমাদের খাওয়া ও তৃপ্তি উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুজাল আছে: একদল AGRP স্নায়ুকোষ, যা খিদের সংকেত পাঠায়, এবং অন্যদল POMC স্নায়ুকোষ, যা তৃপ্তির সংকেত দেয়। তবে প্রশ্ন ছিল, যখন আমরা খাওয়া শুরু করি, তখন কীভাবে খিদে এত দ্রুত কমে যায়? কারণ POMC স্নায়ুজাল কাজ শুরু করে খানিকটা ধীরে। বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করেছিলেন, হয়তো মস্তিষ্কে এমন এক “দ্রুত প্রতিরোধক” স্নায়ুজাল আছে, যা খাওয়ার সময় নিমেষে ক্ষুধাকে দমন করে।

একক কোষ-স্তরে আরএনএ বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা মেলে এক সম্পূর্ণ নতুন স্নায়ুজাল। তারা এর নাম দিয়েছেন BNC2 স্নায়ুকোষ। এই স্নায়ুকোষও আর্কুয়েট নিউক্লিয়াস অঞ্চলে অবস্থিত। এটি বিশেষত ‘লেপ্টিন’ হরমোনের প্রতি সংবেদনশীল। লেপ্টিন আমাদের শরীরে চর্বির পরিমাণের খবর মস্তিষ্কে পাঠায়। অর্থাৎ যখন শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি মজুত থাকে, তখন লেপ্টিনের মাত্রা বেড়ে যায়, খাওয়ার ইচ্ছা কমে আসে। লেপ্টিনের সংকেত পেলে BNC2 স্নায়ুকোষ সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে AGRP স্নায়ুকোষকে দমন করে দেয়, ফলে খিদে হঠাৎ থেমে যায়।

পূর্বে মনে করা হতো, খিদে দমন একটি ধীর প্রক্রিয়া।কিন্তু এই নতুন স্নায়ুকোষ সে ধারণা বদলে দিয়েছে। গবেষকদের মতে, BNC2-এর সক্রিয়তা “তাৎক্ষণিক সুইচের মতো”, যা এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে খিদে বন্ধ করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইঁদুরের মস্তিষ্কে এই স্নায়ুকোষ সক্রিয় করলে তারা সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে দেয়, এমনকি তাদের সামনে খাবার থাকলেও আগ্রহ হারায়। বিপরীতে, এই স্নায়ুজাল নিষ্ক্রিয় করলে প্রাণীরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করে।

এই নতুন স্নায়ুপ্রক্রিয়া, স্থূলতা, অনেক খেয়ে -ফেলা এবং বিপাকীয় রোগের চিকিৎসায় এক নতুন নিশানা হিসেবে উঠে আসছে।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক বলেন, “আমরা এতদিন ধরে শুধু ক্ষুধা সৃষ্টিকারী স্নায়ুকোষের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এখন আমরা সেই স্নায়ু-সুইচ খুঁজে পেয়েছি, যা ক্ষুধাকে হঠাৎ বন্ধ করে দিতে পারে- এটাই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দিক।” বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন মানুষের মধ্যে এই স্নায়ুজালের উপস্থিতি ও কার্যপ্রণালী নিশ্চিত করতে।যদি একই প্রক্রিয়া মানুষের মস্তিষ্কেও থাকে, তবে ভবিষ্যতে এমন ওষুধ তৈরি সম্ভব, যা মস্তিষ্কের এই ‘ক্ষুধা-নিয়ন্ত্রক সুইচ’কে নিয়ন্ত্রণ করবে- একটি বোতাম টিপলেই থেমে যাবে অনিয়ন্ত্রিত খিদে।

 

সূত্র: “MRAP2 modifies the signaling and oligomerization state of the melanocortin-4 receptor” by Iqra Sohail, Suli-Anne Laurin,et.el; 25 September 2025, Nature Communications.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =