একশো বছরের প্রত্যাশার অবসান। হ্যাঁ, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আছে। অবশেষে এমনটাই ঘোষণা করলেন বিজ্ঞানীরা। এক শতক আগে বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এটি থাকার সম্ভাবনা অনুমান করেছিলেন। লাইগো (লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি)-র কার্যনির্বাহী পরিচালক ডেভিড রিৎজ ওয়শিংটনের একটি প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের জানানঃ ‘আমরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত। এটি খুঁজে পাওয়া গেছে।’
এক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, সূর্যের চেয়ে ৩৫ গুণ বড় দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের ফলে একটি তরঙ্গ উদ্ভূত হয়েছিল- বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল গ্রাহকযন্ত্রে সেটি বুঝতে পেরেছেন। এক সেকেন্ডের ২০ হাজার ভাগের ১ ভাগ সময়ের জন্য এটি যন্ত্রে ধরা দিয়েছে।
বার্মিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালবার্টো ভেকিয়া আরো জানানঃ ‘আমরা এতদিন ব্রহ্মাণ্ডের খবর জানতে পারতাম আলোর মাধ্যমে। কিন্তু অতি সামান্য তথ্যই এতে পাওয়া যেত। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কারের ফলে সম্পূর্ণ নতুন তথ্য আমরা পাব। একটি নতুন পথ উন্মোচিত হল।’
কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি এস সত্যপ্রকাশ জানান, ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত নক্ষত্রের আলোর চেয়েও বেশি শক্তি এই সংঘর্ষের ফলে উদ্ভূত হয়েছে। ‘দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংযোজনের কথা এতদিন আন্দাজ করা হয়েছিল’, তিনি বলেন, ‘কিন্তু পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।’
‘জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্রহ্মাণ্ডকে একটি শান্ত সমুদ্রের মতো ভাবেন, এই ধারণা এখন থেকে বদলে গেল’, বলছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক কিপ থর্ণ। ‘দুটি সংঘর্ষকারী কৃষ্ণগহ্বর স্পেসটাইমের উপর একটি ঝড় তুলেছে- সময় এখানে দ্রুত হয়, মন্দীভূত হয়- আবার দ্রুত হয়। স্পেসের আকার এখানে এদিকে ওদিকে বেঁকে যায়।’
প্রিমিয়ার ইনস্টিটিউট অব থিয়োরিটিকাল ফিজিক্সের অধ্যাপক নীল টুরোক জানিয়েছেন, ২০০ বছর আগে মাইকেল ফ্যারাডের তত্ত্বের সাথে শুরু হয়েছিল যে বৈজ্ঞানিক জিজ্ঞাসা তার অবসান ঘটল এই আবিষ্কারের ফলে। রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে আমরা ব্রহ্মাণ্ডের কথা জানতে পারি, এখন আরো ভালো করে আমরা তা জানতে পারব ‘নতুন’ এই তরঙ্গের মাধ্যমে। ‘আলো বা অনুরূপ তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে চার লক্ষ বছর আগেকার ব্রহ্মাণ্ডের কথা জানা যায় না। অতীতের ব্রহ্মাণ্ড আলোর ক্ষেত্রে অস্বচ্ছ, কিন্তু মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ। ফলে এমনকি মহাবিস্ফোরণ (বিগ ব্যাং) সম্পর্কেও অনেক অজানা কথা জানা যাবে’, তিনি বলছেন।