খুব বিরল অবস্থায় অ্যালজাইমার্স রোগ সংক্রামিত হতে পারে

খুব বিরল অবস্থায় অ্যালজাইমার্স রোগ সংক্রামিত হতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বয়স বাড়লে স্মৃতি মাঝেমাঝেই বিশ্বাসঘাতকতা করে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজে না পাওয়া বা একজায়গায় রেখে তা পরে ভুলে যাওয়া, দীর্ঘ দিনের চেনা লোককে দেখেও চিনতে না পারা অথবা কারোর নাম না মনে করতে পারা —বয়স বাড়লে আমাদের এই ধরনের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, স্মৃতি মাঝেমাঝেই আমাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। বয়সজনিত কারণে যে সব সময় ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় তা নয়, কারণ অনেক সময় দেখা যায় এর নেপথ্যে রয়েছে ‘অ্যালজাইমার্স’। এই রোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়- ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতি ৯ জনের মধ্যে ১ জনের এই রোগ হতে পারে। রোগটি ঠিক কী ভাবে হয় তা স্পষ্ট ভাবে জানা না গেলেও আমরা জানি যে অ্যালজাইমার্স সংক্রামক নয়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
গবেষণায় দেখা গেছে অত্যন্ত বিরল পরিস্থিতিতে, অ্যালজাইমার্স রোগ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। সম্প্রতি নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে পাঁচজন ব্যক্তি যারা গ্রোথ হরমোনের দূষিত ইনজেকশন গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে শিশুকাল থেকে অস্বাভাবিকভাবে অ্যালজাইমার্স রোগের বিকাশ শুরু হয়। নিউরোলজিস্ট জন কলিঞ্জ বলেন প্রথমবার আইট্রোজেনিক অ্যালজাইমার্স রোগের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যা চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে সৃষ্ট একটি রোগ। এটি উদ্বেগজনক শোনালেও গবেষকরা কিন্তু জোর দিয়ে বলেছেন যে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মতো রোগীদের দৈনন্দিন জীবনে যত্ন নেওয়ার ব্যক্তি বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে অ্যালজাইমার্স রোগ ছোঁয়াচে নয়।
সমীক্ষার অন্তর্গত ব্যক্তিরা সবাই শিশু বা কিশোর বয়সে গ্রোথ হরমোন ইনজেকশন পেয়েছিলেন। বিভিন্ন বৃদ্ধিজনিত ব্যাধির চিকিত্সার জন্য এই গ্রোথ হরমোন থেরাপি প্রয়োগ করা হত। মৃত মানুষের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে সংগৃহীত গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করা হত শিশুর শরীরে। পরে এই পদ্ধতিটি নিয়ে বিতর্ক বাধে। দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে ক্রুজ়ফেল্ট-জেকব নামে একটি স্নায়ুর রোগ ছড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাপী, ২০০ জনেরও বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে বিশ্বের বহু দেশে চিকিৎসা পদ্ধতিটি নিষিদ্ধ হয়। ডাক্তাররা এখন হরমোনের সিন্থেটিক সংস্করণ ব্যবহার করে। এমনই ৮ জনকে নিয়ে গবেষণা চালান গবেষকেরা। এদের মধ্যে তিনজনের অ্যালজাইমার্স রোগ চিহ্নিত হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে আরও দু’জন ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত এবং দুজনের বৌদ্ধিক দক্ষতার অভাব রয়েছে আর একজনের কোনো উপসর্গ নেই। দেখা গিয়েছে, ওই পদ্ধতিতে মানব শরীরে অ্যামিলয়েড-বিটা প্রোটিন নামে একটি প্রোটিন প্রবেশ করেছে যা পরবর্তী কালে অ্যালজাইমার্স রোগের জন্য দায়ী। তবুও, বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে গ্রোথ হরমোনের কারণে এই ব্যক্তিরা অ্যালজাইমার্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তারা মনে করেন হয়তো বা শৈশবের কোনো অবস্থা যা গ্রোথ হরমোন ট্রিটমেন্ট বা রেডিয়েশনের মতো অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে তার ফলেও এই রোগ হতে পারে। সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী কার্লো কন্ডেলো বলেছেন এর নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নাও পাওয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =