খেলাধুলার সরঞ্জাম থেকে বর্জ্য

খেলাধুলার সরঞ্জাম থেকে বর্জ্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জানুয়ারী, ২০২৫

আধুনিক অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিকের শুরুর দিকের, খেলোয়াড়রা ভারী ভারী সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। সেই সরঞ্জামের আকৃতিও সেরকম উপযুক্ত ছিল না। ১৯০৮ সালের তুলনায় আজ ২০২৪ সালে জ্যাভলিন ছোঁড়ার খেলা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। খেলার বৈচিত্র্য যেমন বেড়েছে, বেড়েছে খেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীর সংখ্যা, খেলোয়াড়দের দক্ষতা আর তার সাথে সাথে ভালো হয়েছে খেলোয়াড়দের ব্যবহৃত সরঞ্জাম। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিটি খেলার সরঞ্জামের মানই উন্নত হয়েছে। ফাইবার-রিইনফোর্সড প্লাস্টিক (এফআরপি) বা ফাইবার-রিইনফোর্সড পলিমারের বাজার আজ রমরমা। এটি এমন একটি যৌগিক উপাদান যাতে পলিমার ম্যাট্রিক্সে ফাইবার ব্যবহার করে পোক্ত করা হয়েছে। এই ধরনের উপাদানকে কম্পোজিট সরঞ্জাম বলে। এই ফাইবার কোনও ক্ষেত্রে কাচ আবার কোনও ক্ষেত্রে কার্বন। বেশিরভাগ বড়ো মাপের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় ব্যবহৃত বস্তুতে এই উপাদান উপস্থিত থাকে। এটি শক্তপোক্ত কিন্তু নমনীয় এবং হালকা ওজনের তাই খেলোয়াড়রা পদক জেতার তাগিদে নিজেদের একেবারে নিংড়ে দেয় আর খেলার উপকরণ তাদের সাহায্য করে। খেলাধুলায় পরিবর্তন আনলেও এই সব উপাদান বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়। আর উদ্বেগজনকভাবে এই কম্পোজিট উপকরণ পুনর্ব্যবহার করা ভীষণ কঠিন। বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত যে খেলাধুলা থেকে বর্জ্যের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে, এই ধরনের যৌগিক বর্জ্যের প্রায় ৯০% ল্যান্ডফিলে যায়। মাত্র ২% কার্বন ফাইবারের জন্য পুনরায় ব্যবহার করা হয়। আর নতুন কম্পোজিট তৈরি করতে প্রচুর শক্তিও খরচ হয়। বিশ্বব্যাপী, প্রতি বছর প্রায় ৭০০০ টন ক্রীড়া সরঞ্জাম ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং তা পুনর্ব্যবহৃত হতে পারে। ফলে রিসাইক্লিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। এই গবেষণায় গবেষকেরা এগুলোর পুনর্ব্যবহারের পদ্ধতি হিসেবে ‘থার্মোকেমিক্যাল রিসাইক্লিং’-এর কথা বলেছেন। কম্পোজিট পুনর্ব্যবহার করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাদের পৃষ্ঠ আরও টেকসই করতে প্রায়শই পলিমার বা রজনের প্রলেপ দেওয়া হয়। ফলে উপকরণগুলোকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যায়। এই কম্পোজিটগুলোর মধ্যে কার্বন ফাইবার সবচেয়ে মূল্যবান অংশ। এই ফাইবার আলাদা করার উপায় খুঁজতে বিজ্ঞানীরা কার্বন ফাইবার কম্পোজিট দিয়ে তৈরি ভাঙা বাইক ব্যবহার করেছিলেন এবং রাসায়নিক ও তাপ ব্যবহার করেন। ট্রায়াল এররের মাধ্যমে তারা দেখেন এগুলো গলানোর ক্ষেত্রে সর্বোত্তম তাপমাত্রা হল- ৪২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায়, তুলনামূলকভাবে অক্ষত আবস্থায় এই ফাইবারগুলো বের করা যায় এবং এদের দৃঢ়তা প্রায় ৯৪% অক্ষত থাকে এবং তাদের মূল শক্তির ৯০% ধরে রাখে। ফলে এগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবার ব্যবহার করা যেতে পারে। নতুন পদ্ধতিটি অন্যান্য প্রক্রিয়ার তুলনায় কম শক্তি ব্যবহার করে এবং তুলনামূলকভাবে পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য উপ-পণ্য তৈরি করে। গবেষকরা মনে করেন যে এই পদ্ধতিটি ছোটো এবং মাঝারি রিসাইক্লিং ব্যবসাগুলোকে সাহায্য করবে।