গণিতজ্ঞ, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে জাদুকরদের মানসিক মিল দেখা যায়

গণিতজ্ঞ, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে জাদুকরদের মানসিক মিল দেখা যায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ নভেম্বর, ২০২৩

জাদুকরদের মনস্তাত্ত্বিক আস্তিনে এমন এক উদ্ভাবনী কৌশল রয়েছে যা তাদের অন্যান্য সৃজনশীল চিন্তাবিদদের যেমন কৌতুক অভিনেতা বা চিত্রশিল্পীদের থেকে আলাদা করে। প্রাথমিক প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে আশ্চর্যজনকভাবে, জাদুবিদ্যার পেশায় থাকা ব্যক্তিদের অন্যান্য শিল্পীদের, এমনকি সাধারণ মানুষের তুলনায় সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত মানসিক রোগ বা বৈশিষ্ট্য কম। প্রকৃতপক্ষে, যারা জাদুকর তারা সঙ্গীতজ্ঞ বা কবিদের তুলনায় কাল্পনিক চিন্তা কম করেন বলে মনে হয়, সম্ভবত তারা কর্মজীবনকে গণিতবিদ বা বিজ্ঞানীর মতো মোকাবিলা করেন। সৃজনশীলতা এবং মানসিক অসুস্থতা বা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধিগুলির মধ্যে যোগসূত্রের প্রচুর ঐতিহাসিক উপাখ্যান পাওয়া গেছে এবং অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা তা সমর্থন করা হয়েছে। পূর্ববর্তী অনেক গবেষণাপত্রে পাওয়া গেছে যে ‘ভিন্ন চিন্তাবিদ’ যেমন সঙ্গীতশিল্পী, কবি, লেখক, কৌতুক অভিনেতা এবং চিত্রশিল্পীদের সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় নেতিবাচক আবেগপূর্ণ মানসিক বৈশিষ্ট্যের হার বেশি থাকে।
সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক ব্যাধির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে হ্যালুসিনেশন, অতিকাল্পনিক চিন্তাভাবনা, বিভ্রান্তি, মনোনিবেশ করতে অক্ষমতা, সামাজিক উদ্বেগ, চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষমতা, কম আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংবেদনশীল অভিব্যক্তি হ্রাস, বা অনুপ্রেরণার তীব্র অভাব। যদি চিকিৎসা না করা হয় এই বৈশিষ্ট্যগুলি ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে এগুলি আমাদের সৃজনশীল সংবেদনশীলতার প্রতি অবদান রাখতে পারে।
জাদুকরদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি খুব একটা দেখা যায় বলে মনে হয় না, যদিও তারা কৌতুক অভিনেতাদের মতোই সৃজনশীল অভিনয়শিল্পী। ওয়েলসের অ্যাবেরিস্টউইথ ইউনিভার্সিটির বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী গিল গ্রিনগ্রসের নেতৃত্বে একটি অনলাইন সমীক্ষায়, ১৯৫ জন জাদুকরের স্ব-প্রতিবেদিত মানসিক স্বাস্থ্য, সৃজনশীলতা এবং মৌলিকত্ব পরিমাপ করা হয়েছে এবং তাদের ফলাফলগুলি সাধারণ জনসংখ্যার ২৩৩ জন ব্যক্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে, পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীর অতীতের তথ্যের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বর্তমান সমীক্ষায় দেখা গেছে জাদুকররা সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য শিল্পীদের তুলনায় জ্ঞানীয় অব্যবস্থা এবং আবেগপূর্ণ অসঙ্গতি উভয় ক্ষেত্রেই কম স্কোর করেছেন। সম্ভবত এর কারণ জাদু কৌশলগুলি সুনির্দিষ্ট মহড়ার উপর নির্ভর করে, যার জন্য তীব্র ফোকাস, বিশদ মনোযোগ, সংযম এবং শৃঙ্খলার প্রয়োজন। যদি সামাজিক উদ্বেগ, দুর্বল একাগ্রতা বা নিম্ন আত্মনিয়ন্ত্রণমূলক মানসিক বৈশিষ্ট্য থাকে তবে তা তাদের পেশায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
গবেষণায় বিশ্লেষিত বেশিরভাগ জাদুকরের ‘অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা’ যেমন হ্যালুসিনেশন, উপলব্ধিগত বিভ্রান্তি, বা অতিকাল্পনিক চিন্তাভাবনা সাধারণ জনগণের থেকে আলাদা নয়, যা থেকে মনে হয় বেশিরভাগই জাদুকরই জানেন তারা সত্যিকারের জাদু পরিচালনা করছেন না। কিন্তু এই ‘অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতায়’ অন্যদের চেয়ে বেশি স্কোর করা জাদুকররা তাদের পারফরম্যান্সে উচ্চ মৌলিকত্বের স্ব-রিপোর্ট করেছিলেন, সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, “তাদের নিজের সৃজনশীল ক্ষমতা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবং সৃজনশীলতা তাদের পরিচয়ের একটি বড় অংশ ছিল।”
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে পদার্থ বিজ্ঞানী এবং শারীরিক বিজ্ঞানীরাও ‘অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা’ এবং জ্ঞানীয় ‘অব্যবস্থা’ বিষয়ে চিত্রশিল্পী এবং সঙ্গীতজ্ঞদের চেয়ে কম স্কোর করেছেন। গ্রীনগ্রসের দল ব্যাখ্যা করেন, জাদুকর এবং বিজ্ঞানী উভয়ই যতটা সম্ভব নির্ভুল হতে সুশৃঙ্খল, অধ্যবসায় এবং বিচক্ষণ অনুশীলনের সাথে কল্পনা এবং সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করেন। লেখক মনে করেন, বিজ্ঞানীদের মতোই, জাদুকররা ছোটো ছোটো পদক্ষেপের উপর একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করেন যা প্রায়শই একাধিক উপায়ে বিভিন্ন সৃজনশীলতার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। গবেষণাটি বিজেপিসাইক ওপেনে প্রকাশিত হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 3 =