আমরা কেউ তাঁর কাছে পড়িনি। তবুও আমরা সকলেই তাঁর ছাত্রছাত্রী। বর্তমান ছাত্রসমাজের কাছে তাঁর নামটা ধীরেধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। অথচ সত্তর-আশির দশকেও তাঁর লেখা পাটীগণিত বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে হাতে ঘুরত। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘নীরবিন্দু’-তে লিখেছেন, ‘যাদব চক্রবর্তীর পাটীগণিতকে কিন্তু বিন্দুমাত্র অবহেলা করিনি। বস্তুত ওঁরই দৌলতে চল্লিশটা নম্বর একেবারে নিয়মমাফিক এসে যেত। এক নম্বরও কমত না, এক নম্বর বেশিও হত না।’ অঙ্ক শেখার জন্য আমরা আমাদের ছাত্রজীবনে কেশব চন্দ্র নাগ-এর অঙ্কের বইয়ের পাশাপাশি যাদবচন্দ্র চক্রবর্তীর পাটীগণিত এবং কে.পি. বসু(কালিপদ বসু)-র বীজগণিত বই দু’টি অবশ্য পাঠ্য ক’রে নিয়েছিলাম। এই বইয়ের মাধ্যমেই যাদববাবুর নামের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, অন্যান্য প্রদেশেও তাঁর এই গণিতের বইটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।
ছাত্রজীবনে যাদব চক্রবর্তীর পা্টীগণিত বইয়ের প্রতি আমাদের যত আগ্রহ ছিল, লেখকের সম্পর্কে জানার আগ্রহ ততটা ছিল না। জীবনের দীর্ঘপথ পেরিয়ে জীবন সায়াহ্নে এসে, বারবার মনে হচ্ছে, ছাত্রজীবনে যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করিনি সেই প্রশ্নের উত্তর কি এখন খোঁজা যায় না? আর সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে যাদববাবু সম্পর্কে যে খণ্ডচিত্রের সন্ধান পেয়েছি, তা-ই এখানে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।
যাদবচন্দ্র চক্রবর্তীর জন্ম সম্ভবত ১৮৫৪ সালে। পৈত্রিক বসত বাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জ(সাবেক পাবনা) জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে। পিতা কৃষ্ণচন্দ্র চক্রবর্তী পেশায় ছিলেন একজন পুরোহিত। নিজের গ্রামের স্কুলেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই তাঁর মেধার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। ১৮৭৬ সালে তিনি প্রথমবিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ ক’রে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা চ’লে আসেন। এখানে তিনি এফ.এ. পড়ার জন্য জেনারেল এসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। এন্ট্রান্সে প্রথমশ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ায় মাসিক পনেরো টাকা সরকারি বৃত্তি পান। এই বৃত্তি না-পেলে কলকাতায় থেকে পড়াশোনা চালানো তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ত। শৈশবে বাবাকে হারান। যৎসামান্য জমিজমা থেকে যে আয় হত তা দিয়ে সংসার চলত না। তাই মা দুর্গাসুন্দরী দেবীকে মাঝেমাঝে গায়ের গয়না বিক্রি ক’রে সামাল দিতে হত। কৃষ্ণচন্দ্র চক্রবর্তীর ছয় ছেলেমেয়ে — তিন ছেলে, তিন মেয়ে। বড়ছেলে যাদবচন্দ্র বৃত্তির অর্থে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের কিছু ব্যয়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। বৃত্তির পনেরো টাকার মধ্যে নিজের খরচের জন্য দশ টাকা রেখে বাকি পাঁচ টাকা মা-কে পাঠিয়ে দিতেন। এর ফলে যাদবচন্দ্রের হাতে অনেক সময় বই কেনার পয়সা থাকত না। সংসারে শত অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও যাদবচন্দ্রের মা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেন নি।
জেনারেল এসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক গৌরীশংকর দে ছিলেন যাদবচন্দ্রের শিক্ষাগুরু এবং পথপ্রদর্শক। তাঁর মতো ছাত্রদরদী শিক্ষক সে সময়ে খুব কমই ছিলেন। এই মেধাবী ছাত্রের উচ্চশিক্ষায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য প্রয়োজন হলেই তিনি সর্বদা তাঁর পাশে থাকতেন।
এফ.এ. পরীক্ষায় প্রথমবিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ায় যাদবচন্দ্রের বৃত্তির টাকা পনেরো টাকা থেকে বেড়ে পঁচিশ টাকা হয়। তবে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। বৃত্তির টাকা পেতে হলে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে হবে। অন্য কোনো কলেজে পড়লে বৃত্তির টাকা পাওয়া যাবে না। সে সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের মাইনে সবচেয়ে বেশি ছিল। ওই মাইনে দিয়ে এবং অন্যান্য খরচ চালিয়ে বৃত্তির টাকায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যাদবচন্দ্রের সাধ্যের বাইরে ছিল। এই পরিস্থিতিতে হয় তাঁকে পড়াশোনা বন্ধ ক’রে দিতে হয়, নতুবা বৃত্তির টাকা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো কলেজে ভর্তি হতে হয়। গৌরীশংকর দে-র পরামর্শে তিনি দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিলেন। ভর্তি হলেন ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজে। বিষয় হিসেবে বেছে নিলেন ইংরেজি ও অঙ্ক।
১৮৮০ সালে যাদবচন্দ্র কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পাশ করেন। শৈশব থেকেই তাঁকে দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। পরিবারের বড় ছেলে সে। মা-কে একটু সুখ দেওয়া যায় কিনা সেই চিন্তায় এবার তিনি কাজের সন্ধান শুরু করলেন; পেয়েও গেলেন। সিটি কলেজে অধ্যাপনার কাজ। এরপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।
গৌরিশংকরের ইচ্ছে নয়, যে তাঁর প্রিয় ছাত্রের পড়াশোনা এখানেই থেমে যাক। তাঁর পরামর্শেই যাদবচন্দ্র এম.এ. ক্লাসে ভর্তি হন। ছাত্রের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে তাঁর শিক্ষাগুরুর সবসময় খেয়াল ছিল। যতরকম সাহায্য করা যায় তা তিনি তাঁর ছাত্রকে করতেন। ১৮৮৬ সালে যাদবচন্দ্র এম.এ. পাস করেন। এর একবছর পর তিনি সিটি কলেজের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আলিগড় পাড়ি দেন। আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজের পরিচালকের অনুরোধে সেখানে অধ্যাপকের পদে যোগ দেন ১৮৮৮ সালের ১লা জানুয়ারি। তখন তাঁর বয়স ৩৪ বছর। অঙ্কের এই নতুন মাস্টারমশাই অচিরেই সকলের মন জয় ক’রে নিলেন। পরবর্তীকালে তিনি কলেজের শুধু শিক্ষকই ছিলেন না কলেজ পরিচালনাতেও সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতেন।
স্থানীয় মানুষেরা বলত ‘ছাউনি শহর’। একসময় এখানে ছিল বিস্তীর্ণ বন। ইংরেজরা এই বন সাফ ক’রে সিভিল স্টেশন তৈরি করেন। সেই থেকে এই এলাকার ঐ নাম মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত। যাদবচন্দ্রের মতো আরও অনেক বাঙালী ছাউনি শহরে তথা আলিগড়ে বসবাস করতেন। এর ফলে সেখানে একটি বাঙালী পাড়া বা বাঙালী সমাজ গ’ড়ে ওঠে। যাদবচন্দ্র তাঁর কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই কলেজে এবং এই শহরেই কাটিয়ে দেন।
যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং কালীপদ বসু (কে.পি. বসু নামেই বেশি পরিচিত) যেন এক যুগল মিলন। একজনের পাটীগণিত আর অন্যজনের বীজগণিত— ছাত্রছাত্রীদের দু’টি অপরিহার্য অঙ্কের বই। দু’জনে ছিলেন এম.এ. ক্লাসে সহপাঠী এবং বন্ধু। কালীপদ বসু-র জন্ম যশোহর জেলার ঝিনাইদহে। তাঁকেও দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ ক’রে প্রতিষ্ঠা পেতে হয়েছে। এম.এ. পাশ করার পর প্রথমে তিনি রিপন কলেজে যোগ দেন। পরে কটকের র্যাডনেস কলেজে অধ্যাপনা করেন। তাঁর লেখা ‘অ্যালজেব্রা মেড ইজি’ আজও ছাত্রছাত্রীদের বীজগণিত শেখার আকরগ্রন্থ।
শিক্ষক হিসেবে যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী-র নাম আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজের চারদেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অঙ্ক শেখার জন্য যেমন তাঁর কাছে বহু ছাত্র আসত তেমন দেশের বাইরে বিশেষ ক’রে ব্রহ্ম, বেলুচিস্তান, পারস্য, আরব, উগান্ডা, মরিশাস প্রভৃতি দেশ থেকেও অনেক ছাত্র তাঁর কাছে অঙ্ক শিখতে আসত। পড়ানোর গুণে এবং সদয় ব্যবহারে তিনি অচিরেই ছাত্রদের মন জয় ক’রে নিতেন। শুধু ছাত্রসমাজেই নয়, ছাউনি শহরের সকল মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন আদর্শ শিক্ষাগুরু। অধ্যাপক গৌরীশঙ্কর দে-র আদর্শেই তিনি নিজেকে গ’ড়ে তুলেছিলেন। গুরুশিষ্য মিলে অগণিত গণিতের শিক্ষক রেখে গেছেন ভারতের এবং বিদেশের মাটিতে।
যাদবচন্দ্র আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজে প্রায় তিন দশক অধ্যাপনা করেছেন। ১৯১৬ সালে বাষট্টি বছর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। চৌত্রিশ বছর বয়সে যে যুবকটি নিঃশব্দে এই শহরে পা রেখেছিলেন তাঁর বিদায় বেলায় সেই শহরের মানুষ সজল চোখে, ভগ্নহৃদয়ে তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানায়।
ফিরে আসেন যাদবচন্দ্র নিজের জন্মভূমি সিরাজগঞ্জে। অবসর জীবন তিনি এখানেই কাটাবেন এমন ভাবনা তাঁর অনেকদিন আগে থেকেই ছিল। তাই আলীগড়ে থাকাকালীনই ১৯০১ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি-তে একটি পাকা বসতবাড়ি তৈরি ক’রে রেখেছিলেন। এছাড়াও গ্রামের বাড়ী তেঁতুলিয়ায় তিনি একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও তাঁর স্কুলজীবন কেটেছিল ময়মনসিংহে। সেখানকার উকিল কালীনাথ ভাদুড়ী ছিলেন তাঁর স্থানীয় অভিভাবক। তাঁর বাড়িতে থেকেই যাদবচন্দ্র স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন। এই সহৃদয় মানুষটির কথা তিনি যে কোনোদিন ভোলেন নি, তা তাঁর কথাবার্তায় প্রকাশ পেত। ভাইবোনেদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অগাধ। সকলকেই তিনি লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। তবে দুঃখের বিষয় ভাইবোনেরা অল্পবয়সেই ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ ক’রে কলেজে ভর্তি হবেন, সেই সময়ে রামচন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয়ের কন্যা গিরিজাসুন্দরীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। স্ত্রীর বাপেরবাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জ মহকুমার কাওয়াখোলা গ্রামে। তাঁদের পাঁচ ছেলে তিন মেয়ে। ছেলেমেয়েরা বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে প্রবাসে মানুষ হোক, যাদবচন্দ্রের তা পছন্দ ছিল না। তাই তিনি লেখাপড়া শেখানোর জন্য সকলকে সিরাজগঞ্জে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ছেলেরা সকলেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। মেজছেলে প্রফুল্লচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট, তৃতীয় ছেলে সুধীরচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন ডাক্তার। ছোটছেলে প্রতুলচন্দ্র চক্রবর্তী এম.এ. পাশ ক’রে বই প্রকাশনার ব্যবসায় যুক্ত হন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম ছিল পি.সি. চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং; ঠিকানা ছিল ৭৪ বেচু চাটার্জী স্ট্রিট (ঝামাপুকুর কালীবাড়ির পাশে)।
যাদবচন্দ্র তাঁর পাটীগণিত বইটি লেখা শুরু করেন সিটি কলেজে থাকাকালীন। অর্থাৎ ১৮৮০ থেকে ১৮৮৬ সালের মধ্যে কোনো একসময়। বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৯০ সালে। তখন তিনি আলিগড়ে। স্কুলের পাঠ্যবই হিসেবে এটি লেখা হয়নি। তিনি লিখেছিলেন প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে। বইটি লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে। প্রকাশিত হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটি ছাত্রছাত্রীদের মনজয় ক’রে নেয়। জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকায় বইটি বাংলা, হিন্দী, উর্দু, নেপালী, অসমীয়া ও মারাঠী ভাষায় অনুদিত হয়। এই প্রসঙ্গে একটা কথা ব’লে রাখা ভালো, যে গণিতে যাদবচন্দ্রের কোনো মৌলিক অবদান নেই। তাই তাঁর লেখা পাটীগণিত বইতে কোনো মৌলিক গবেষণার ফসল খুঁজতে যাওয়া নিরর্থক। পাটীগণিত বই ছাড়াও তিনি একটি বীজগণিত বইও লিখেছিলেন। এছাড়া শিশুদের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি অঙ্কের পাঠ্যবই লিখেছিলেন। তবে পাটীগণিতের বহুল জনপ্রিয়তার ফলে তাঁর অন্য কীর্তিগুলি ঢাকা পড়ে যায়।
আলিগড় থেকে চ’লে এসে সিরাজগঞ্জে থাকার সময় যাদবচন্দ্র পুরসভার সদস্য হন এবং পৌরপ্রধানের পদ অলংকৃত করেন। কিছুদিনের জন্য তিনি ম্যাজিস্ট্রেটও(সাম্মানিক) হন। অবসরের পর তিনি সিরাজগঞ্জে বছর ছয়-সাত ছিলেন। ছেলেরা সকলেই কলকাতায়। তাঁরা চান বাবা তাঁদের কাছে এসে থাকুন। অনেক চিন্তাভাবনা শেষে তিনি কলকাতায় ছেলেদের কাছে চ’লে এলেন। উঠলেন বেচু চাটার্জী স্ট্রিটের বাড়িতে। আর ফেরেন নি সিরাজগঞ্জে। ১৯২৩ সালের ২৬ নভেম্বর অগণিত ছাত্রছাত্রীকে চোখের জলে ভাসিয়ে চিরবিদায় নেন। ৬৮ বছর বয়সে রক্তআমাশয় ছিনিয়ে নিয়ে গেল পরিবার ও গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে। এই বিদায়ক্ষণে আলিগড়ের মানুষদের মনের অবস্থা কেমন ছিল জানা নেই। তবে প্রথম বিদায়ক্ষণটি ছিল অত্যন্ত বেদনাবিদুর। একটি-দুটি নয়, বিদায় সম্বর্ধনা সভা হয়েছিল বারোটি। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে সোনার চেন ও ঘড়ি দিয়ে সম্মান জানান। ছাত্রদের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছিল রূপোর চায়ের পাত্র। একটি হিন্দু ছাত্রদের তরফে, অপরটি মুসলমান ছাত্রদের তরফে। সম্বর্ধনা সভাগুলিতে দেশ ও বিদেশের বহুছাত্র উপস্থিত ছিলেন।
প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে সেদিন ছাউনি শহরের সকলেই চ’লে এসেছিলেন আলিগড় স্টেশনে। সকলেই বাকরূদ্ধ। দু’চোখে জলের ধারা। ট্রেন স্টেশন ছাড়ার মুহূর্তে পুষ্পবৃষ্টিতে শেষ সম্মান জানিয়েছিলেন তাঁরা।
ভারতীয় উপমহাদেশের এই বিশিষ্ট গণিতবিদ অনেকের কাছে যাদববাবু নামেও পরিচিত ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘গণিত সম্রাট’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।
যাদবচন্দ্র চক্রবর্তীর সিরাজগঞ্জের বাড়ি যাদবনিবাস এখন আর নেই। হারিয়ে গেছে সেখানকার শান-বাঁধানো পুকুরঘাট, বাঘের মূর্তি খচিত প্রবেশদ্বার, ফল ও ফুলের বাগান। সেখানে গড়ে উঠেছে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
অধ্যাপক যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। আছে তাঁর ‘পাটীগণিত’, যা আজও ছাত্রছাত্রীদের কাছে গণিতশিক্ষার এক অমূল্য গ্রন্থ।
তথ্য সূত্রঃ
- অমর বাঙালিঃ গৌরী সেন
- সেকালের শিক্ষাগুরুঃ হারাধন দত্ত
- নীরবিন্দু ১: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
- শিক্ষাগুরু যাদবচন্দ্রঃ কৃশানু ভট্টাচার্য; নন্দন
- https://bn.wikipedia.org/wiki/যাদব_চন্দ্র_চক্রবর্তী