গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে শিল্পকলার চোখ দিয়ে গাছ চেনার ক্ষমতা ‘শাখা ব্যাস স্কেলিং সূচক’ (branch diameter exponent scaling) নামক একটি গাণিতিক নীতির সাথে যুক্ত। বাস্তব জগতে গাছগুলিতে পাওয়া এই প্যাটার্নটি শৈল্পিক শৈলী এবং সংস্কৃতির মধ্যে পরিব্যাপ্ত। যদিও শিল্পের সৌন্দর্য বিষয়ীগত (সাবজেকটিভ), কিন্তু একটি নতুন গবেষণা অনুসারে কিছু অন্য বক্তব্য উঠে আসছে। শিল্পকর্মে গাছ চিনতে পারার ক্ষমতা নৈর্ব্যক্তিক (অবজেকটিভ) এবং তুলনামূলকভাবে সহজ; এবং তা গণিতের সাথে যুক্ত হতে পারে। মিশিগান এবং নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি গাছের শাখা-প্রশাখার আপেক্ষিক পুরুত্ব তার গাছ সদৃশ চেহারাকে প্রভাবিত করে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো শিল্পীরা অবশ্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ধারণাটি পরীক্ষা করে দেখেছেন। কিন্তু এবার গবেষকরা গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহকারে গণিতের একটি নতুন শাখা নিয়ে এসেছেন। গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক জিংগি গাও বলেন, “শিল্পের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা নান্দনিক বা ব্যক্তিগত বলে মনে হয়, কিন্তু আমরা গণিত ব্যবহার করে এটি বর্ণনা করতে পারি। ” তাঁর সহ-গবেষক মিচেল নিউবেরি বলেন, ” আমরা এখানে এমন একটি সর্বজনীন জিনিস নিয়ে এসেছি যা শিল্প ও প্রকৃতির সকল গাছের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । এটি বিভিন্ন ধরণের গাছের চিত্রায়নের মূলে রয়েছে, এমনকি সেগুলি বিভিন্ন শৈলী বা বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথেও যুক্ত হয়ে থাকলেও। ”
অনুপাতের প্রশ্নে এই গবেষক জুটির ব্যবহৃত গণিত মূলত ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতির সাথে জড়িত। ফ্র্যাক্টাল হল এমন এক কাঠামো যা বিভিন্ন স্কেলে একই ভাবচিত্রবিন্যাসের (মোটিফ) পুনরাবৃত্তি করে। জীববিজ্ঞান প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ ফ্র্যাক্টালে পরিপূর্ণ। ফুসফুস, রক্তনালী এবং অবশ্যই গাছের শাখা-প্রশাখা তার নিদর্শন। গাও বলেছেন, “একটি গাছের দিকে তাকালে দেখবেন, তার শাখাগুলি আরও শাখা-প্রশাখা তৈরি করছে। তারপর শিশু শাখাগুলি মূল শাখার চিত্রর পুনরাবৃত্তি করে। ” বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে, গণিতবিদরা একটি ফ্র্যাক্টালের জটিলতা পরিমাপ করার জন্য ফ্র্যাক্টাল মাত্রা নামে একটি সংখ্যা প্রবর্তন করেছিলেন। গাও এবং নিউবেরি নিজেদের গবেষণায় গাছের শাখার জন্য একটি অনুরূপ সংখ্যা বিশ্লেষণ করেছিলেন, যাকে তারা ‘শাখা ব্যাস স্কেলিং’ সূচক (branch diameter exponent scaling) বলেছিলেন। ‘শাখা ব্যাস স্কেলিং’ প্রতি বড়ো শাখায় কতগুলি ছোট শাখা রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে শাখা ব্যাসের তারতম্য বর্ণনা করে।
গাও এবং নিউবেরি বিশ্বজুড়ে নানা শিল্পকর্ম বিশ্লেষণ করেছেন। যেমন ভারতের সিদ্দি সৈয়দ মসজিদের ষোড়শ শতাব্দীর পাথরের জানালার খোদাই, জাপানি শিল্পী মাতসুমুরা গোশুনের “চেরি ব্লসমস” নামে একটি ১৮ শতকের চিত্রকর্ম এবং ডাচ চিত্রশিল্পী পিট মন্ড্রিয়ানের বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের দুটি কাজ। ভারতে মসজিদের খোদাই প্রাথমিকভাবে এই গবেষণাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। নিউবেরি বলেন, প্রায় সর্পিল শাখা থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত বিশেষভাবে রূপায়িত বক্ররেখা এই গাছগুলির মধ্যে একটি সুন্দর, প্রাকৃতিক অনুপাতের অনুভূতি সঞ্চার করে। এটি তাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল যে আমরা যেভাবে গাছ চিনতে পারি তার মধ্যে আরও সর্বজনীন কোনও কারণ থাকতে পারে কিনা। গবেষকরা দা ভিঞ্চির গাছের বিশ্লেষণ থেকে একটি সূত্র পেয়েছেন: গাছের ডাল কতটা পুরু তা এই গবেষণার খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও অন্য চিত্রগুলো থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন। এই অভিনব গবেষণা গণিত আর শিল্পকলার ইতিহাসকে এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।
সূত্র : “Scaling in branch thickness and the fractal aesthetic of trees” by Jingyi Gao and Mitchell G Newberry, 11 February 2025, PNAS Nexus.
DOI: 10.1093/pnasnexus/pgaf003
