গরমে খিদের অনুভূতি কী কমে যায়?

গরমে খিদের অনুভূতি কী কমে যায়?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ আগষ্ট, ২০২৪
খিদে

গরমকালে তাপমাত্রা থাকে ঊর্ধ্বমুখী। ঘামে ভেজা শরীর, চিটচিটে, আঠালো। আর সঙ্গে কমে যায় কাজের ইচ্ছা। গরম, ঘাম আর ক্লান্তিতে কাজ করার শক্তি কমতে থাকে। এ সময়ে তাই খাওয়াদাওয়ায় জোর দেওয়া হয়ে যায় জরুরি। যাতে শরীর কাজ করার শক্তিটুকু পায়। কিন্তু দেখা গেছে গরমে আমাদের খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছেই চলে যায়। তাহলে কি তাপমাত্রা ও খিদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক রয়েছে? গরমকালে কেন আমাদের কম খিদে পায়?
বিজ্ঞানীরা অবশ্য বহু আগেই খিদের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ঠান্ডার সময় মানুষের শরীরে ক্যালোরির চাহিদা বেড়ে যায়। এর একটি মৌলিক জৈবিক কারণ রয়েছে। ক্যালোরি শক্তির একক। শক্তি ব্যবহার করলে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়, যা মানুষকে ঠান্ডা আবহাওয়ায় তাদের শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু উষ্ণ আবহাওয়ায় মানুষ কম ক্ষুধার্ত বোধ করে। কীভাবে এটি ঘটে তা স্পষ্ট না হলেও এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন- হরমোন, প্রোটিন এবং পরিবেশগত কারণ। এই কারণগুলো আমাদের খিদেকে প্রভাবিত করে । সাথে সাথে গরমের দিনে আমাদের খিদের অনুভূতি হ্রাস পাওয়াকেও প্রভাবিত করে। পরিবেশগত পরিবর্তন সত্ত্বেও আমাদের দেহ সর্বদা অভ্যন্তরীণ অবস্থা স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে। একে হোমিওস্ট্যাসিস বলে। এই কারণেই প্রখর রোদে আমাদের শরীরে ঘাম হয় অথবা কঠোর অনুশীলনের পরে আমরা তেষ্টা মেটানোর জন্য জল পান করি। খিদে পাওয়া অনেকটা একই রকমের- হোমিওস্ট্যাটিক। আমাদের শরীরে ক্যালোরি কম থাকলে আমরা ক্ষুধার্ত বোধ করি এবং খাওয়ার পর তৃপ্ত বোধ করি। এর ফলে আমাদের অভ্যন্তরীণ শারীরবৃত্তীয় অবস্থার ভারসাম্য বজায় থাকে। এই প্রক্রিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ করে হরমোন, আমাদের শরীরে রাসায়নিক বার্তাবাহক। ক্ষুধা এবং পূর্ণতা বা তৃপ্তির সাথে দুটি হরমোন সম্পর্কিত- ঘ্রেলিন, যা পেট খালি থাকলে নিঃসৃত হয় এবং লেপটিন, যা ফ্যাট কোশ থেকে নিঃসৃত হয় এবং পেট পূর্ণ হলে মস্তিষ্ককের হাইপোথ্যালামাসে বার্তা পাঠায়। হাইপোথ্যালামাসের নীচের অংশে কিছু স্নায়ুকোশ রয়েছে যা “ক্ষুধা এবং পূর্ণতার অনুভূতি তৈরি করছে”। সেখানে, ঘ্রেলিন খিদের অনুভূতির সাথে যুক্ত নিউরনকে উদ্দীপিত করে, আমাদের ক্ষুধার্ত বোধ করায়। অন্যদিকে, লেপটিন, এই নিউরনগুলোকে বাধা দিয়ে অন্য স্নায়ুকোশকে উদ্দীপিত করে, যা আমাদের পেট ভরার অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। কিন্তু কীভাবে তাপমাত্রা এই জটিল ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে তা এখনও অজানা। মস্তিষ্কে তাপমাত্রার সেন্সর বা কিছু প্রোটিন রয়েছে। আমাদের শরীরের উষ্ণতা একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছলে এই প্রোটিনের আকৃতি পরিবর্তন হয়। ইঁদুরের উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে ঠান্ডা তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের কোশ স্নায়ুকোশকে তথ্য পাঠায়, যা ক্ষুধার অনুভূতি বাড়ায়। অন্যদিকে, গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্নায়ুকোশে অবস্থিত তাপ-সংবেদনশীল প্রোটিন সক্রিয় হয়, যা পূর্ণতার সাথে যুক্ত নিউরন সক্রিয় করে তোলে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে মস্তিষ্কে হয়তো এমন কিছু সার্কিট রয়েছে যা আমরা কতটা খাই তা প্রভাবিত করতে একসাথে কাজ করে। গরম হোক বা ঠান্ডা, খিদের অনুভূতি আসলে একটি জটিল ভারসাম্য — এমন একটি উপায় যা আমাদের শরীরকে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে সাহায্য করে।