গাছের ইচ্ছাশক্তি

গাছের ইচ্ছাশক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ মে, ২০২৫

গবেষণায় দেখা গেছে গাছ তার বৃদ্ধি না শ্বাসকার্য কোনটিকে আগে গুরুত্ব দেবে সেই জটিল সিদ্ধান্ত সে নিজেই নিতে পারে। গাছের শ্বাসক্রিয়ার প্রধান উপাদান হলো পাতার নিচের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র বা স্টোমাটা, যা কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) গ্রহণ করে খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষ চালায়। তবে এক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল সালোকসংশ্লেষের উপজাত দ্রব্য হিসেবে জল তৈরি হয়, ফলে প্রতিদিন একটি গাছ কয়েক শো লিটার জল হারাতে পারে।
বেশিরভাগ বিজ্ঞানী মনে করতেন যে গাছ যত বেশি CO₂ গ্রহণ করবে, ততই সালোকসংশ্লেষ চালিয়ে যাবে, এবং জল সংকট হলে তবেই স্টোমাটা বন্ধ করবে। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, গাছ প্রকৃতপক্ষে রাতের সময় জল পুনরায় সংগ্রহ করার মাধ্যমে নিজেদের বৃদ্ধি বজায় রাখে। যদি মাটি শুষ্ক হয়, গাছ পর্যাপ্ত জল সংগ্রহ করতে পারে না এবং তখন শ্বাসক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়টি হলো, গাছ সংকট আসার জন্য অপেক্ষা করে না, বরং যদি রাতে পর্যাপ্ত জল সংগ্রহ না করতে পারে, তাহলে পরের দিন সকালে স্টোমাটা খোলেই না। অর্থাৎ, সালোকসংশ্লেষকে উপেক্ষা করে নিজের বৃদ্ধি বজায় রাখার চেষ্টা করে, কারণ জল ছাড়া বৃদ্ধি সম্ভব নয়।
এই আবিষ্কার জলবায়ু পরিবর্তন এবং বনজ কার্বন সংরক্ষণ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী ধারণাগুলোর ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। জল সংকট হলে গাছ যদি সালোকসংশ্লেষ শুরুর আগেই বন্ধ করে দেয়, তাহলে শুষ্ক আবহাওয়ায় বনভূমি প্রত্যাশিত পরিমাণে কার্বন সংরক্ষণ করতে পারবে না।
নতুন এই গবেষণা আমাদের বুঝতে সাহায্য করছে যে গাছ কেবল জড় প্রাণী নয়, বরং প্রতিদিন বেঁচে থাকার কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × four =