গাছের ছত্রাকের মধ্যে বিবর্তন দেখা গেছে

গাছের ছত্রাকের মধ্যে বিবর্তন দেখা গেছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

আমাদের চারপাশে নানা বিবর্তন হতে থাকে, যখন কোনো প্রজাতি ,তার বেঁচে থাকার বা সহাবস্থানের উপায় খুঁজে বের করার জন্য লড়াই করে। তবে এটি দেখতে পাওয়া বেশ বিরল সুযোগ। গবেষকরা বেশ বিস্মিত হয়েছিলেন, যখন তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে ছত্রাকের একটি প্রজাতি জৈবিক সীমানাগুলিকে অতিক্রম করে বিবর্তিত হচ্ছে। জেনেটিক এবং রাসায়নিক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে, মাইকোলজিস্টদের একটি ডেনিশ নেতৃত্বাধীন দল পাঁচটি আলাদা আলাদা স্থান থেকে ১০টি উদ্ভিদ প্রজাতি জরিপ করেছে যেটি প্রায় ৫০০ প্রজাতির সমন্বয়ে গঠিত মাইসেনা ছত্রাক, যা সাধারণত বনেট মাশরুম নামে পরিচিত। ছত্রাক রাজ্যে, মাইসেনা প্রজাতি তিনটি পরিবেশগত নিসের মধ্যে পচনশীল, বা স্যাপ্রোট্রফস গোষ্ঠীতে থাকে। অর্থাৎ মৃত এবং ক্ষয়প্রাপ্ত জৈব পদার্থ থেকে এরা পুষ্টি গ্রহণ করে, বাস্তুতন্ত্রের পুষ্টিচক্রে, পুষ্টি ফিরিয়ে দেয়। স্যাপ্রোট্রফের ছাড়া অন্যান্য দুটি ছত্রাক গোষ্ঠী হল পরজীবী এবং মিথোজীবী ছত্রাক যারা জীবন্ত উদ্ভিদে বসবাস করে, উদ্ভিদ থেকে পুষ্টি নেয় বা তাদের হোস্টের সাথে পুষ্টি বিনিময় করে।
হার্ডার এবং সহকর্মীরা আর্কটিক, আলপাইন এবং নাতিশীতোষ্ণ বন্য উদ্ভিদের তথ্য জরিপ করেছেন এবং উদ্ভিদের শিকড়ের নমুনা নিয়ে অধ্যয়ন করে ১০টি উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে ৯টিতে মাইসেনা ছত্রাকের জেনেটিক স্বাক্ষর খুঁজে পেয়েছেন। হার্ডার ব্যাখ্যা করেছেন, ডিএনএ অধ্যয়ন ব্যবহার করে, ধারাবাহিকভাবে দেখা গেছে যে মাইসেনা ছত্রাক জীবন্ত উদ্ভিদ হোস্টের শিকড়ে পাওয়া যাচ্ছে। গবেষকদের মতে বনেটগুলি একটি বিবর্তনীয় বিকাশের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যেখনে ছত্রাকটি উদ্ভিদের পচনকারী অংশের বদলে জীবন্ত উদ্ভিদকে আক্রমণ করছে।
যদিও অধ্যয়নটি ছোটো তবুও এর ফলাফলগুলি ছত্রাকের পরিবেশগত বহুমুখিতা দেখাচ্ছে এবং গবেষকরা মনে করছেন মাইসেনা ছত্রাকে মাইকোরাইজাল ক্ষমতার বিকাশ হচ্ছে। যার সাহায্যে ছত্রাক হোস্ট উদ্ভিদের মূল কলাতে উপনিবেশ করে। মাইকোরাইজাল ছত্রাক উদ্ভিদের সহায়ক বা ক্ষতিকারক, অর্থাৎ মিথোজীবী বা পরজীবী হতে পারে। তবে উদ্ভিদের শিকড় এবং ছত্রাকের নাইট্রোজেন স্তরের বিশ্লেষণ থেকে গবেষকরা নির্ধারণ করেছেন যে কিছু মাইসেনা উদ্ভিদকে সাহায্য করছে বলে মনে হচ্ছে। ঠিক প্রথম মাইকোরাইজাল ছত্রাকের মতো যা সম্ভবত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর আগে গাছপালাকে পৃথিবীর জমিতে স্থাপন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
গবেষকরা দেখেছেন, কিছু মাইসেনা গাছের কার্বনের সাথে গাছের পুষ্টির জন্য অপরিহার্য নাইট্রোজেন বিনিময় করে। মাইসেনার এই নতুন ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে মানুষের কিছু অবদান আছে। যখন মানুষ একই গাছের প্রজাতি সারি সারি রোপণ করে বনভূমি তৈরি করে, সেখানে দেখা গেছে গাছের শিকড় ব্যাপকভাবে মাইসেনা ছত্রাকে সংক্রামিত হয়েছিল। অথচ জাতীয় উদ্যান থেকে সংগৃহীত পরিপক্ক পিনাস সিলভেস্ট্রিস গাছের নমুনায় মাইসেনার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি দেখা গেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, বাগানে তরুণ চারাগাছের শিকড় মাইসেনা সহজে আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু বনে নানা ধরনের ছত্রাক বহু বছর ধরে থাকাতে মাইসেনা সেভাবে বিস্তারলাভ করতে পারেনি। অর্থাৎ মানুষের কাজকর্ম কিছুটা হলেও মৃতজীবী ছত্রাককে পরজীবী ছত্রাকে পরিণত হতে সাহায্য করছে। গবেষণাটি এনভায়রনমেন্টাল মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − two =