গাছ আগ্নেয়গিরির পূর্বাভাস দিতে সক্ষম

গাছ আগ্নেয়গিরির পূর্বাভাস দিতে সক্ষম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জানুয়ারী, ২০২৫

আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত শুরু হলে, তার ভয়ঙ্কর শক্তি আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু এর সূত্রপাত যেন উদ্ভিদের মূলের মতো, যার বেশিরভাগ কার্যকলাপ মাটির নীচে অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার আগেই ঘটে। আগ্নেয়গিরির প্রথাগত মনিটরিং সরঞ্জাম সিসমিক কার্যকলাপ পরিমাপ করে, গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করে তার বিশ্লেষণ করে। কিন্তু এই পদ্ধতি মাটিতে লুকোনো সতর্কতা চিহ্ন খুঁজে নাও পেতে পারে। গবেষকরা অগ্ন্যুৎপাত ঘটার আগে কী ধরনের লক্ষণ হতে পারে তা শনাক্ত করার সূক্ষ্ম উপায় অনুসন্ধান করছেন, বিশেষত জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে অবস্থিত আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্রে। তারা উদ্ভিদ থেকে এই সংকেত পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই গবেষণা জিওকেমিস্ট্রি, জিওফিজিক্স, জিওসিস্টেমে প্রকাশিত হয়েছে।
আগ্নেয়গিরির গ্যাস, কার্বন ডাই অক্সাইড প্রায়ই ম্যাগমার ঠেলায় ওপরের দিকে নির্গত হয়। একে শনাক্ত করা কঠিন, কারণ এই গ্যাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ সাধারণ। আবার কিছু দূরবর্তী আগ্নেয়গিরিতে স্থায়ী সেন্সর বা সহজে পৌঁছনো সম্ভব নয়, এর জন্য বিজ্ঞানীদের এমন সৃজনশীল পদ্ধতি বের করতে হবে, যা ছোটো পরিবর্তন বুঝতে পারে। কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির রবার্ট বোগ, এমন এক প্রকল্পের নেতৃত্বে দেন। তিনি ইয়েলোস্টোন ক্যালডেরাতে হাইড্রোথার্মাল এলাকার কাছাকাছি গাছপালার স্বাস্থ্যের নিদর্শন পরিমাপের জন্য সহকর্মীদের সাথে কাজ করেছিলেন। গবেষকরা দেখেন, কীভাবে গাছপালা মাটির নীচে ক্রমবর্ধমান ম্যাগমা বা আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপের উচ্চ ঝুঁকি, অথবা আসন্ন অগ্ন্যুৎপাতের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়।
গাছপালা তাদের চারপাশের পরিবর্তনের সাপেক্ষে নানাভাবে মানিয়ে নেয়। এতে তাদের সালোকসংশ্লেষণ পরিবর্তন হয়, পাতার গঠন পাল্টায়। কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার এবং মাটির তাপমাত্রার তারতম্য গাছের বিকাশকে প্রভাবিত করে, আগ্নেয়গিরিময় অঞ্চলে এই ধরনের পরিবেশ দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা জানান, এই ধরনের সংকেত অগ্ন্যুতপাত ঘটার কয়েক মাস বা বছর আগে উদ্ভিদের কলায় দেখা যেতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র চোখ দেখে বিরাট অরণ্যে এই পরিবর্তন ধরা কঠিন হতে পারে। এইজন্য স্যাটেলাইট ইমেজিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটা বড়ো এলাকা স্ক্যান করে গাছ কোনো পারিপার্শ্বিক চাপে আছে কিনা তা শনাক্ত করতে পারে।
নরমালাইজড ডিফারেন্স ভেজিটেশন ইনডেক্স (NDVI) নামে এক গণনায় ক্লোরোফিলের মাত্রা পরিমাপ করে উদ্ভিদ কতটা জোরালোভাবে সালোকসংশ্লেষণ করছে তা ধরা যায়। এর স্কোর নেতিবাচক সংখ্যা থেকে ১ পর্যন্ত বিস্তৃত, উচ্চতর সংখ্যা সুস্থ পাতা নির্দেশ করে৷ সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে এই মান তুলনা করে, গবেষকরা ভূপৃষ্ঠের পরিবেশে পরিবর্তনের সঙ্গে সংযুক্ত প্রবণতা দেখতে পারেন। আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে কার্বন ডাই অক্সাইডের হঠাৎ বৃদ্ধি, উত্তপ্ত তরল প্রাথমিকভাবে স্থানীয় উদ্ভিদের জন্য ভালো। কিন্তু ক্ষতিকারক গ্যাসের উচ্চ ঘনত্ব বা খুব গরম মাটি গাছ মেরে ফেলতে পারে। একাধিক বছর ধরে এই উত্থান-পতন ট্র্যাক করে ভূগর্ভস্থ পরিবর্তনের সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের একটা ধারণা গড়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =