
অস্ট্রেলিয়ার ঘুমকাতুরে, নিরীহ প্রাণী কোয়ালা। প্রায় পুরো জীবনই কেটে যায় গাছের ডালে বসে ইউক্যালিপটাস পাতা চিবোতে চিবোতে। তবে গাছ ছেড়ে এদের মাটিতে নামার অর্থ প্রায় মৃত্যু ডেকে আনার সমান! সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, কোয়ালারা দিনে গড়ে মাত্র ১০ মিনিট মাটিতে কাটায়। অথচ তাদের অধিকাংশ মৃত্যু ঘটে ঠিক এই অল্প সময়ের মধ্যেই। কুইন্সল্যান্ডের গবেষকেরা ২ হাজার ঘন্টার বেশি সময় ধরে কোয়ালাদের ওপর নজর রেখেছেন। GPS ও অ্যাক্সিলোমিটার কলারের সাহায্য নেন । দেখা গেছে ৬৬% ক্ষেত্রে কোয়ালাদের মৃত্যু ঘটে ঠিক যখন তারা মাটিতে থাকে। অর্থাৎ মাত্র ১% সময়ই তাদের জন্য সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। শহরতলির রাস্তাঘেঁষা বনাঞ্চলের বাসিন্দা কোয়ালারা প্রায়ই খাবারের সন্ধানে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যাওয়ার জন্য মাটিতে নামতে বাধ্য হয়। আর ওই সময়েই তারা গাড়ির নীচে পিষে যায় কিংবা পোষা কুকুরের আক্রমণে প্রাণ হারায়। গবেষণার একাংশে দেখা যায়, অধিকাংশ কোয়ালা রাতে মাটিতে নামে। গড়ে ৪ থেকে ৫ মিনিটের জন্য। কেবল একটি কোয়ালাকে ৪৫ মিনিট ধরে মাটিতে হাঁটতে দেখা গেছে। এটি ছিল সকলের মাঝে ব্যতিক্রম। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার রাস্তাগুলি কোয়ালাদের জন্য যেন মৃত্যুফাঁদ। সমস্যার মূল গাছে নয়, গাছের ব্যবস্থাপনায়। যত বাড়ছে বনভূমি কাটছাঁট, কৃষিজমির সম্প্রসারণ এবং নগরায়ন, ততই কমে আসছে কোয়ালাদের নিরাপদ, পরস্পর সংযুক্ত গাছের পরিসর। ফলে, খাদ্যের সন্ধানে বা বাসা বদলের উদ্দেশ্যে কোয়ালাদের প্রায়ই নিচে নামতে হয়। তাই এমনভাবে গাছ লাগানো প্রয়োজন যাতে কোয়ালারা এক গাছের শাখা বেয়ে সরাসরি আরেক গাছে যেতে পারে – মাটিতে না নেমেই। তাছাড়া, শহরে ও শহরতলি অঞ্চলে সুড়ঙ্গ পথ, রাস্তা-পেরোনো সেতু ও কুকুর সামলানোর ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। এই প্রাণীদের রক্ষা করতে গেলে শুধু বন সংরক্ষণ নয়, বনের গঠন ও সংযুক্তি নিয়েও ভাবতে হবে।
সূত্র : The Society for Experimental Biology Annual Conference in Antwerp, Belgium, July 2025.