সম্প্রতি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় শিশুদের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে জানা গেছে, তাদের মধ্যে ৯৬% মনে করে তাদের মৃত্যু আসন্ন। প্রায় অর্ধেক শিশু এই ভয়ংকর মর্মঘাতী অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মৃত্যু কামনা করছে। অন্য একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, সমীক্ষাধীন শিশুদের মধ্যে ৯২% এই বাস্তবতা মাথায় নিতে পারছে না, ৭৯% দুঃস্বপ্ন দেখছে, ৭৩% মারমুখী প্রবণতায় আক্রান্ত। ওয়র চাইল্ড ইউ কে সংস্থার প্রধান হেলেন প্যাটিসন জনিয়েছেন, হাসপাতাল, স্কুল এবং ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এই মানসিক বিধ্বংসও অভূতপূর্ব। গাজায় যেসব পরিবারের অন্তত একটি শিশু বিকলাঙ্গ, আহত কিংবা অনাথ হয়েছে সেইসব পরিবারের ৫০৪টি শিশুর পিতামাতা কিংবা পরিচর্যাকারীদের প্রশ্ন করেছিলেন সমীক্ষাকারীরা। এছাড়াও আরও গভীরে গিয়ে কিছু সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এ সমীক্ষা তাঁরা করেছিলেন ২০২৪এর জুন মাসে। মাঝের কয়েক মাসে সমস্যা তীব্রতর হয়েছে, সন্দেহ নেই। রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসাব অনুযায়ী, তখনো অব্দি গাজায় ৪৪০০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং মৃতদের অন্তত ৪৪% শিশু। গাজার এক সংস্থা সাম্প্রতিক এক মনস্তাত্ত্বিক সমীক্ষা থেকে জানতে পেরেছে, শিশুদের মধ্যে উচ্চমাত্রায় মানসিক চাপের লক্ষণ পরিস্ফুট, যথা আতঙ্ক, উদ্বেগ-আশঙ্কা, ঘুমের ব্যাঘাত, দুঃস্বপ্ন, দাঁতে নখ-কাটা, কোনো কিছুতে মন দিতে না-পারা, কারুর সঙ্গে মেলামশা না-করা। তখনকার হিসেব মতো প্যালেস্টাইনের প্রায় ১৯ কোটি মানুষ, অর্থাৎ মোট জনসমষ্টির প্রায় ৯০%, বাড়িছাড়া হয়েছেন, অনেকে একাধিকবার। এর অর্ধেকই শিশু। সমীক্ষাধীন শিশুদের ৬০% জানিয়েছে, তারা যুদ্ধের সময় ভয়ানক মর্মঘাতী ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, কেউ কেউ অনেক বার। তখনকার হিসেব মতো গাজার প্রায় ১৭০০০ শিশু অনাথ। তবে সংখ্যাটা এর চেয়ে ঢের বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা। এই সব শিশুদের ন্যূনতম অধিকার গুরুতর রূপে লঙ্ঘিত হওয়ার এবং তাদের শোষিত ও নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। এর ফলে যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পরেও এদের মনে এইসব ক্ষতচিহ্ন বহুকাল টিকে থাকবে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করবে। এখনই এইসব শিশুদের অনেককেই মৃত্যুকামনা গ্রাস করেছে, বিশেষ করে ছেলেদের (৭২%), মেয়েদের অপেক্ষাকৃত কম (২৬%)। সমীক্ষা-প্রধান প্যাটিসন বলেছেন, ‘শিশুমনের স্বাস্থ্যের এই চরম বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের এখনই সক্রিয় হওয়া উচিত, নইলে এই মানসিক আঘাতের যন্ত্রণা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হবে। দশকর পর দশক ধরে এই অঞ্চল এর ফল ভুগবে’।