জীবনযাপনের গতির সঙ্গে দৌড়তে গিয়ে অনেক সময়ে আমরা হাঁপিয়ে উঠি। ঘরে-বাইরে সমানতালে ‘তাল’ দিতে না পেরে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা গ্রাস করতে থাকে, বেড়ে চলে মানসিক চাপ। সম্প্রতি এক নতুন গবেষণা জানাচ্ছে মানসিক উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা বাড়াতে মানুষের তৈরি শব্দ বা গাড়ির আওয়াজও অনেকাংশে দায়ী। আমরা জানি যে তীব্র শব্দে বিরক্তি আসে অথবা শরীরে কষ্ট হয়। যাদের রেললাইনের ধারে বাড়ি অথবা পেশাগত ভাবে এমন জায়গায় দিনভর থাকেন, যেখানে তীব্র শব্দ বা একটানা কোলাহল শুনতে হয় এতে অজান্তেই তাদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি হতে থাকে। উচ্চস্বরে কানে আওয়াজ নিতে নিতে কখন যে কান ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, তা বোঝাই যায়না। কানে কম শোনা, মাথা যন্ত্রণা, বুক ধড়ফড় করা আর এখন এই নতুন গবেষণা জানাচ্ছে মানসিক চাপ, উদ্বেগও বৃদ্ধি পেতে পারে শব্দ দূষণের কারণে। PLOS ONE –জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা জানাচ্ছে যে পাখির গানের মতো প্রাকৃতিক শব্দ যেমন রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসযন্ত্রের হার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেইসঙ্গে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে পারে। বিপরীতভাবে, মানুষের দ্বারা সৃষ্ট শব্দ যেমন গাড়ি বা ট্রেনের আওয়াজ অথবা বিমানের শব্দ বিভিন্নভাবে মানুষের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে অনুমান করা হয়। এই নতুন গবেষণায়, ৬৮ জন অংশগ্রহণকারী ৩-মিনিট সময়ব্যাপী তিন ধরনের শব্দ শুনেছেন- সূর্যোদয়ের সময় রেকর্ড করা পাখির ডাক বা প্রাকৃতিক শব্দ, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রথম ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক শব্দের সঙ্গে প্রতি ঘন্টায় ২০ মাইল বেগে চলা রাস্তার গাড়ির আওয়াজ এবং তৃতীয় ক্ষেত্রে প্রথম ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক শব্দের সঙ্গে প্রতি ঘন্টায় ৪০ মাইল বেগে চলা গাড়ির আওয়াজ। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাকৃতিক শব্দ শোনার ফলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা হ্রাস পায় এবং মানসিক চাপ কমে যাওয়ার পর মেজাজও ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক শব্দের সঙ্গে যখন গাড়ির আওয়াজ যুক্ত হয় তখন মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হয়, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের মতে শহুরে এলাকায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করে শব্দ হ্রাস করা মানুষের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।