
উদ্ভিদের গৃহপালন হলো সেই প্রক্রিয়া যেখানে বন্য উদ্ভিদকে মানুষের ব্যবহারের উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যযুক্ত করে তৈরি করা হয়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া যেখানে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভিদের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে। অনেকটা কুলের মতো দেখতে
অ্যাজুকি বিন (ভিগনা আঙ্গুলারিস) পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিম্বিগোত্রীয় খাদ্যশস্য, যা জাপান, চীন ও কোরিয়ায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্নে এবং রান্নায় বহুল ব্যবহৃত । তবে এই উদ্ভিদকে গৃহপালিত করার ইতিহাস দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত ছিল। ভূ-তাত্ত্বিক ও জিনতাত্বিক গবেষণা থেকে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। নতুন এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রায় ৭০০টি অ্যাজুকি বিনের নমুনা বিশ্লেষণ করে এই দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাজুকি বিনের গৃহপালিত রূপের সূচনা সম্ভবত তিন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে জাপানে জমন জনগোষ্ঠীর সময়কালে । এর চৈনিক জাতিগুলির জিনোমে বেশি বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়, যা সাধারণত উৎসগত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে জাপানি বন্য শিমের সঙ্গে গৃহপালিত অ্যাজুকির ক্লোরোপ্লাস্ট ডিএনএ-এর মিল অনেক বেশি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, গৃহপালিত করার কাজ প্রথমে জাপানে শুরু হয়, তারপর সেই জাত চীনে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানকার বন্য শিমের সঙ্গে সংকরায়ন মারফত একটি জটিল জিনগত নিদর্শন তৈরি করে।বিজ্ঞানীরা গৃহপালিত করার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করেছেন। ১) বীজের লাল রঙ, ২) কালো দাগের অনুপস্থিতি এবং ৩) বীজের গুটি না ফাটার বৈশিষ্ট্য। লাল রঙের উৎপত্তি হয় VaANR1 নামে একটি জিনে অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই পরিবর্তন এনজাইমের (উৎসেচকের) কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে, যার ফলে নির্দিষ্ট রঙের রঞ্জক উৎপাদিত হয়। কালো দাগের অনুপস্থিতির জন্যে জিনের একপ্রকার মুছে যাওয়া দায়ী। বীজের গুটি না ফাটার জন্য VaMYB26 জিনে একটি বিশেষ পরিব্যক্তি পাওয়া গেছে। প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের পিছনে রয়েছে সাধারণ মেন্ডেলীয় জিনতাত্ত্বিক ভিত্তি।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পরিব্যক্ত জিনগুলো গৃহপালিত করার সময়ের অনেক আগেই (পাঁচ হাজার বছরেরও পূর্বে)উদ্ভিদের মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছিল। এ থেকে বোঝা যায়, স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে হয়তো আগেই দুর্বল ধরনের প্রাকৃতিক বা মানবিক নির্বাচন কাজ করছিল।
এই গবেষণা শুধু অ্যাজুকি বিনের গৃহপালনের ইতিহাসই উন্মোচন করেনি, বরং পূর্ববর্তী জিনঘটিত ও প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের মধ্যকার অসামঞ্জস্যও ব্যাখ্যা করেছে। একই সঙ্গে এও প্রমাণিত যে, জাপানের জমন জনগোষ্ঠী শুধুমাত্র শিকারী নয়, বরং আংশিক কৃষিকাজের সাথেও যুক্ত ছিল।
এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতের উদ্ভিদ গৃহপালিতকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি জিনতত্ত্বে নতুন দিক নির্দেশনা দেবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।