গোলকৃমির রাসায়নিক জীবন

গোলকৃমির রাসায়নিক জীবন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ মার্চ, ২০২৫

আমাদের এই গ্রহটি প্রাণে পরিপূর্ণ। এর ক্ষুদ্রতম বাসিন্দাদের মধ্যে গোলকৃমিরা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ক্ষুদ্র গোলকৃমি প্রায় সর্বত্র বাস করে। এরা মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতেও পারে। সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় তাদের পৃষ্ঠদেশের রাসায়নিক গঠন পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে কী ভাবে তারা পরিবেশ ও পরস্পরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। এটি আমাদের বিবর্তনকে বোঝার ক্ষেত্রে এবং পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘স্কুল অফ ফার্মেসি’ তে বর্ধক উত্তল লেন্স-এর নিচে গোল কৃমিগুলিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সি. এলিগ্যান্স এবং পি. প্যাসিফিকাস প্রমুখ দু ধরণের ক্ষুদ্র কৃমিকে অধ্যয়ন করার জন্য শক্তিশালী মাস স্পেকট্রোমেট্রি ইমেজিং যন্ত্র ব্যবহার করেছেন।গবেষণায় দেখা যায় কৃমির ত্বক তৈলাক্ত ও জটিল। এই ত্বক কীভাবে কৃমির শরীর এবং আচরণকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে তাঁরা গবেষণা করেছেন । মানুষের জিনের প্রায় ৬০- ৭০ শতাংশ এই কৃমির জিনের সাথে মিলে যায় । বিজ্ঞানীরা উন্নত ইমেজিং পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখেছেন গোল কৃমির বাইরের স্তর কীভাবে বৃদ্ধি পায় । দেখা গেছে এই রাসায়নিকগুলি কৃমির বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়, বিভিন্ন ধরণের কৃমির মধ্যে পার্থক্য করে এবং কৃমি কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে তাকে প্রভাবিত করে। ত্রিমাত্রিক অর্বিএসআইএমএস যন্ত্র ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা কৃমিদের পৃষ্ঠতলের অণুর সূক্ষ্ম রূপ দেখতে পেয়েছেন। যন্ত্রটি একটি অতি-নির্ভুল স্ক্যানারের মতো কাজ করে।এর সাহায্যে গবেষকরা অত্যন্ত উচ্চ ঘনত্বে জৈবিক উপাদানকে অধ্যয়ন করতে পারেন ।অর্থাৎ তারা সবচেয়ে ছোট রাসায়নিক পরিবর্তনগুলিও সনাক্ত করতে পারেন , যা রোগকে বোঝার জন্য, নতুন ওষুধ তৈরি করার জন্য এবং উপাদান উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে প্রথমবার নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রিমাত্রিক অর্বিএসআইএমএস যন্ত্র ব্যবহার করা হল । এই উন্নত প্রযুক্তি কঠিন পদার্থ থেকে শুরু করে নরম কলা এবং জৈবিক কোষের আণবিক গঠন বিশ্লেষণ করে। একটি বিশেষ রশ্মি ব্যবহার করে পাতলা স্তর অপসারণ করে অণুবীক্ষণিক কাঠামোগুলির ত্রিমাত্রিক ছবিও তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা গোল কৃমির বাহ্যিক স্তর নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন এর প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ চর্বি (লিপিড) দিয়ে তৈরি।কৃমিগুলির বেড়ে ওঠা এবং বিভিন্ন জীবন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বাহ্যিক স্তরের রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয়। গোলকৃমির তৈলাক্ত স্তরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তাদের জলযোজিত থাকতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে রক্ষা করে। কিছু ক্ষুদ্র কৃমি, যেমন প্রিস্টিওনচাস প্যাসিফিকাস, ক্যানোরহ্যাবডাইটিস এলিগেন্স কৃমিদের শিকার করে। তারা কেবল দৃষ্টি বা গন্ধের উপর নির্ভর করে না, বরং স্পর্শের মাধ্যমে শিকারের পৃষ্ঠের রাসায়নিক পদার্থ সনাক্ত করে। এই লিপিডগুলি সংকেতের মতো কাজ করে। শিকারিকে জানিয়ে দেয় শিকার কাছাকাছি আছে। শিকারের লিপিড পরিবর্তন হলে তাদের ধরা সহজ হয়। ডক্টর চৌহান বলেছেন, এই কৃমিগুলির পৃষ্ঠের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে তাদের বেঁচে থাকাকে প্রভাবিত করে তার অনুধাবন নতুন আবিষ্কারের পথ খুলে দিতে পারে, পরজীবী ঘটিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইতেও সাহায্য করতে পারে।এইসব আবিষ্কার মৌলিক জীববিজ্ঞানের সীমা ছাড়িয়েও পরজীবী নিয়ন্ত্রণের নতুন উপায়, ফসল সংরক্ষণ, এবং লিপিড ভিত্তিক প্রতিরক্ষা তৈরির পথ খুলে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =