
চীনের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক স্থাপিত হলো। তারা প্রথমবারের মতো এক অপরিচিত গ্রহাণু থেকে পাথরের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছে। মিশনটির নাম তিয়েন ওয়েন -২। মিশনটির লক্ষ্য হলো কামোওয়ালেওয়া নামক ছোটো গ্রহাণু সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা। এই গ্রহাণুটির প্রস্থ ৪০-১০০ মিটার এবং এটি প্রতি ২৮ মিনিটে একবার ঘূর্ণন সম্পন্ন করে , এর ফলে নমুনা সংগ্রহ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হতে পারে।
তিয়েন ওয়েন -২ মিশনটি ২৮শে মে চীনের দক্ষিণে শিচাং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে স্থানীয় সময় রাত ১.৩১ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়। জাতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান তথ্য সংগ্রহ পরিকল্পনাকারী সু-ইয়ান বলেন, মহাকাশযানটি যখন আকাশের বাঁধন ছিন্ন করে আরো এগিয়ে যায় তখন তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছিলেন।গ্রহাণু কামোওয়ালেওয়া একটি আধা উপগ্রহ অর্থাৎ , এটি চাঁদের মতো সরাসরি মাধ্যাকর্ষণের টানে পৃথিবীর
চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে না। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি হয়তো চাঁদেরই একটা খন্ড যা কোনো মহাজাগতিক বস্তুর সাথে সংঘর্ষের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। অথবা, এটি মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে এসেছে।তিয়েনওয়েন-২ মিশনটি এই গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করার পর পৃথিবীতে ফিরে আসবে এবং এরপর এক ধূমকেতু সংক্রান্ত অভিযানে যাবে। সংগৃহীত নমুনা থেকে গবেষকরা গ্রহাণুর গঠন ,উৎস ও বিবর্তনের বিষয়ে গুরত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন।
নমুনা সংগ্রহের জন্য তিনটি ভিন্ন কৌশলের কথা ভাবা হয়েছে। প্রথম কৌশলে মহাকাশযানটি গ্রহাণুর ১ মিটার ওপরে ভেসে থাকবে এবং একটি রোবটিক বাহু দিয়ে উপরের স্তরের মাটি সংগ্রহ করবে। দ্বিতীয়ত একটি নমুনা সংগ্রহকারী সন্ধায়ক (প্রোব) দিয়ে উপরের স্তরের আলগা অংশকে সংগ্রহ করা হবে।
তৃতীয়ত, যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয় তবে মহাকাশযানটি তার তিনটি পা সদৃশ অংশ দিয়ে গ্রহাণুতে অবতরণ করবে এবং রোবোটিক বাহু দিয়ে নিজেকে স্থির রেখে নমুনা সংগ্রহ করবে ।গ্রহাণুটিতে পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের মাঝামাঝি,যেখানে এটি প্রায় ৯ মাস অবস্থান করবে।এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা- নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে বিভিন্ন গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে, যেমন ইতোকাওয়া , রিউগু ইত্যাদি গ্রহাণু থেকে। চীন যদিও চাঁদের উভয় দিক থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে তবে, এটি তাদের প্রথম গ্রহাণু অভিযান। বিজ্ঞানীদের আশা, কামোওয়ালেওয়ার মতো গ্রহাণুর গঠন সম্পর্কে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন।
এই মিশন চীনের মহাকাশ গবেষণার সক্ষমতা আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।