গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট

গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ নভেম্বর, ২০২৫

গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ওই সময়ই প্রথমবার বড় পরিমাণে অক্সিজেন, বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত হতে শুরু করে। আজ থেকে প্রায় দু’ শ কোটি বছর আগেও পৃথিবীর বাতাসে এই পরিমাণ অক্সিজেন ছিল না। বাতাসে অক্সিজেন উঠে আসতে প্রায় একশ কোটি বছর দেরী হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা সেই বিলম্বের কারণের উপরই আলোকপাত করেছে। সাথে নিকেল ও ইউরিয়া এই দুই উপাদানের ভূমিকা বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আর্কিয়ান যুগে (প্রায় ৪০০০–২৫০০ মিলিয়ন বছর আগে) সায়ানোব্যাকটেরিয়া প্রথম সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু সেই অক্সিজেন তৎক্ষণাৎ পরিবেশে সঞ্চিত হতে পারছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে অতিমাত্রায় অক্সিজেন, কেবল বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরেই থেকে যাচ্ছিল। অথচ জীবাণুরা কিন্ত অক্সিজেন সৃষ্টিতে সক্ষম ছিল। আসলে ভূমিতে উপস্থিত নিকেল ও ইউরিয়া সহ কিছু খনিজ উপাদান এক্ষেত্রে অক্সিজেন সঞ্চয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল। ফলত অক্সিজেনের পরিবেশগত স্তর বাড়তে দেরী হয়। গবেষকরা প্রাচীন পৃথিবীর শর্ত অনুকরণ করে একটি পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন। সেখানে নিকেল ও ইউরিয়ার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করে তারা দু’ধাপে একটি পরীক্ষা পরিচালনা করেন।

 

ক. প্রথম ধাপে গবেষকরা, আর্কিয়ান যুগের আবহাওয়ার পরিবেশকে ল্যাব-শর্তে পুনরায় সৃষ্টি করেন। অ্যামোনিয়াম, সায়ানাইড এবং লৌহের যৌগসমূহকে UV‑C আলোর অধীনে রেখে তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেন। সেটি আর্কিয়ান যুগে উচ্চ মাত্রার অতি বেগুনি রশ্মি বিকিরণ যুক্ত পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই পরীক্ষায় দেখা যায় উল্লিখিত শর্তে ইউরিয়া প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হতে পারে।

 

খ. দ্বিতীয় ধাপটিতে তারা সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে আলো ও অন্ধকার চক্রে বৃদ্ধি লাভ করতে দিয়ে বিভিন্ন মাত্রায় নিকেল ও ইউরিয়ার প্রভাবের মূল্যায়ন করেন। আলোক ঘনত্ব ও ক্লোরোফিল‑এর সামগ্রিক পরিমাপের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি লক্ষ্য করা হয়। এই আলোক ঘনত্ব সায়ানোব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি মাপার একটি সহজ ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। সাধারণত স্পেকট্রোফটোমিটার দিয়ে ৭৫০ nm (OD₇₅₀) বা ৭৩০ nm (OD₇₃₀) তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পরিমাপ করা হয়। এই মান থেকে দেখা যায় কোষগুলো কতটা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেটাই সরাসরি কোষঘনত্ব ও জৈব ভরের নির্দেশক। আলোক ঘনত্ব যত বেশি, তরল পরিমন্ডলে সায়ানোব্যাকটেরিয়ার ঘনত্ব তত বেশি। পরীক্ষার ফলাফল একটি মডেলের অনুযায়ী। তাতে উচ্চ নিকেল ও ইউরিয়া স্তর সায়ানোব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির পথে প্রধান বাধায় পরিণত হয়। “ঐ অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বাড়তে পারছিল না এবং ধারাবাহিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন নিষ্কাশন করতে ব্যর্থ হছিল”। নিকেল ও ইউরিয়ার মাত্রা ধীরে ধীরে কমালে, পরিবেশ সায়ানোব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল হয়ে ওঠে। তাদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন বের হয়। সেটা গ্রেট অক্সিডেশনের ইভেন্টকে ঘটিয়ে তোলার সহায়ক।

 

এই পরীক্ষা কেবল যে ভূতাত্ত্বিক অতীতকেই ব্যাখ্যা করে তা নয়, অন্য গ্রহের প্রাণসঙ্গত পরিবেশ অন্বেষণের ক্ষেত্রে ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, কোন কোন রাসায়নিক উপাদান অক্সিজেন বৃদ্ধিকে সীমিত বা সহজতর করে। এগুলিকে শনাক্ত করা গেলে, দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণে সঠিক পূর্বাভাস এবং জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন অন্বেষণে সুবিধা হবে। বর্তমান গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে নিকেল ও ইউরিয়ার মতো উপাদানগুলি পৃথিবীর জীবজগত গঠন ও অক্সিজেন বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসেবেও কাজ করেছে। নিকেলের ধীর হ্রাস এবং ইউরিয়ার মাত্রার সঙ্গতিপূর্ণ পরিবর্তনের সঙ্গে সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার উৎকর্ষ ঘটতে শুরু করে। পরবর্তীতে তা ব্যাপকভাবে অক্সিজেন উৎপাদন করে এবং গ্রহকে জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ করে তোলে।

 

 

সূত্র : “Biogeochemical impact of nickel and urea in the great oxidation event” by Dilan M. Ratnayake, Ryoji Tanaka, Eizo Nakamura, et.al; ( 12th August 2025), Communications Earth & Environment.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 2 =