ঘরে ফেরা করোনার

ঘরে ফেরা করোনার

অভিজিৎ চৌধুরী
Posted on ৫ আগষ্ট, ২০২১
ঘরে ফেরা করোনার

উহান থেকে গতবছর চলে যাবার সময় করোনা দিনক্ষণ ঠিক করে বলে যায়নি কবে ফিরবে আবার অথবা ফিরবে কিনা! অথচ হল তাই। এই বুধবার সেই উহান শহরে ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের সবার আবার করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন চৈনিক কর্তৃপক্ষ। কারণ যে বোলতা সারা পৃথিবীতে উড়তে শুরু করেছিল সেখান থেকেই ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে, তা বিশ্বভ্রমনের পর ভীমরুল হয়ে জন্মভূমিতে ফিরেছে বলে খবর। সিরিয়াল কিলারের বৈশিষ্ট্যই হল সে ফিরে ফিরে আসে পাপের জায়গায়। কালান্তক অসুখের অপরাধীও তা করে, সাফল্যের আনন্দই হোক অথবা বিবমিষার ঘোরেই হোক। এ যেন অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে ঘরে ফেরা। ১০ই মার্চ, ২০২০ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং করোনা বিজয়ের কেতন উড়িয়েছিলেন উহানের মাটিতে দাঁড়িয়েই। করোনা তখন উহান , ইউরোপের পথ ঘুরে আমেরিকায় ঢুকব ঢুকব করছে। বছরখানেকেরও বেশী দুনিয়াকে ক্ষতবিক্ষত করে গত দিন পনেরো ধরে করোনা আবাব্র চীনে ফিরেছে, প্রথমে একটা দুটো তারপর অনেক। অবশ্যই শঙ্খচিল, শালিকের বেশে নয়। করোনার পা-এর ছাপ দেখা গেছে ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ১৭টিতে, দেশের অন্তত ২৫টি শহরে। চীনের সংবাদ মাধ্যম সিনহুয়া সুত্রে প্রকাশ এসবই ডেলটা প্রতিরূপের প্রকোপ। পৃথিবী জুড়েই এখন ডেলটা প্রতিরূপে করোনা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শরীরের গঠনের সামান্য পরিবর্তন করে নিয়ে সে যে রূপ নিয়েছে তাতে বেড়ে গেছে তার একজন থেকে আর একজনে ছড়ানোর ক্ষমতা, এমনকি ভ্যাকসিনের বেড়াজাল ছিঁড়ে লাফ দেবার মতো শক্তি। আর চীনে ঢুকেছে এই ডেলটাই। বেজিং শহরেও তার পথ চলার আওয়াজ। প্রথমে চীনের শ’দুয়েক বিমান কর্মীর মধ্যে ধরা পড়ে ডেলটা। তারপর চিরুনিতল্লাসি চালিয়ে ধরা পরেছে স্থানীয়ভাবে সংক্রামিত আরও ৭১ জনের সন্ধান। এতেই হয়েছে শঙ্কা।

মঙ্গলবার এ চিত্র প্রকাশ পাবার পর বুধবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্যকমিশন সতর্ক করেছেন দেশবাসীকে। সীমান্ত করা হয়েছে বন্ধ- ধারনা হচ্ছে এবার চীনে করোনা এসেছে মায়ানমার থেকে। কঠোর বিধি নিষেধের ঘেরা টোপে দেশের অনেকটাই। ৩১ টি প্রদেশের মানুষজনকেই বলা হয়েছে নিজের জায়গা না ছাড়তে। এর মধ্যে চারটি অতি উপদ্রুত আর ১২০ টি মাঝারি গোছের সংক্রমণের এলাকা চিহ্নিত করে সম্পূর্ণ বিছিন্ন করা হয়েছে অন্যদের থেকে। দেশের দশটি শহর থেকে বেজিং-এ ঢোকার সব রেল-টিকিট বাতিল করা হয়েছে। উড়ান বন্ধ নানজিং এবং ইয়াং ঝু শহরের সাথে দেশের অন্য জায়গার মধ্যে। চীনের ফাউচি বলে পরিচিত ডাঃ ঝং নান শন বলেছেন যে সিয়াংঝিয়া মি শহর এই মুহূর্তে চীনের দ্বিতীয় ঢেউ এর বিরুদ্ধে লড়াই এর প্রাণকেন্দ্র। উল্লেখ করা দরকার চীনের ৪০ শতাংশ মানুষ এর মধ্যেই দেশেই তৈরি দুটো ভ্যাকসিন পেয়েছেন। চীন পৃথিবীর আরও অনেক দেশে সে দেশে তৈরি সিনোভ্যাক বিক্রি বা দান করেছে। দেরিতে আসা দ্বিতীয় ঢেউ চীন কেমন করে সামলায়- তা জানার অপেক্ষায় থাকবে পৃথিবী। বিশ্ব রাজনীতির অনেকটা তো এখন করোনা কেন্দ্রিক।