ঘুমের মধ্যে স্বস্তিদায়ক শব্দ আমাদের হৃদস্পন্দনকে ধীর করে

ঘুমের মধ্যে স্বস্তিদায়ক শব্দ আমাদের হৃদস্পন্দনকে ধীর করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ মার্চ, ২০২৪

ফ্রিবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় গিগা- সেন্টার অফ রিসার্চ সাইক্লোট্রন-এর গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি যুগান্তকারী গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে যে ঘুমন্ত অবস্থায়ও বাইরের বিশ্বের সাথে মানুষের শরীরের সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয় না। জার্নাল অফ স্লিপ রিসার্চ-এ প্রকাশিত এই গবেষণাটি প্রকাশ করে যে আমাদের হার্ট ঘুমের সময় শোনা বিভিন্ন ধরনের শব্দে সাড়া দেয়। স্বস্তিদায়ক বা আনন্দদায়ক শব্দগুলো হার্টের ক্রিয়াকলাপকে ধীর করে, যা ঘুমের গভীর অবস্থাকে প্রতিফলিত করে। পূর্বে আমাদের শরীরের কাজ এবং বৌদ্ধিক প্রক্রিয়া যেমন স্মৃতি, আবেগ, উপলব্ধি প্রভৃতির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়েছে কিন্তু সেই অধ্যয়ন বেশিরভাগ সংঘটিত হয়েছে যখন আমরা জেগে থাকি সেই সময়ে। এই ধারণাটি ইঙ্গিত দেয় যে বৌদ্ধিক ক্রিয়াকলাপ আমাদের শারীরিক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত। পূর্ববর্তী গবেষণা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হার্টের কার্যকলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেছে, এবং এটি আমাদের হার্টের ক্রিয়াকলাপ ও ঘুমের মানের মধ্যে একটি সংযোগের ইঙ্গিত দিয়েছে। গবেষক ক্রিস্টিনা শ্মিডের মতে ঘুম সংক্রান্ত বেশিরভাগ গবেষণা মস্তিষ্কের উপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং খুব কমই শারীরিক কার্যকলাপের উপর জোর দেয়। তবুও অনুমান করা হয় যে কথোপকথনের সময় ছাড়াও ঘুমের সময়েও আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে সংযোগ থাকে। আমরা কীভাবে চিন্তা করি এবং আমাদের পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই তা বোঝার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক এবং দেহ উভয়ের তথ্যই বিবেচনা করা দরকার। গবেষণায় ঘুমের পর্যায় শনাক্তকরণ করতে স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি ব্যবহার করে ঘুম রেকর্ড করা হয়েছিল এবং তার ভিত্তিতে স্কোর দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম বা EEG, চোখের নড়াচড়ার জন্য ইলেক্ট্রোওকিউলোগ্রাম বা EOG, এবং পেশীর কার্যকলাপের জন্য ইলেক্ট্রোমাইয়োগ্রাফি বা EMG, ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ চিহ্নিত করার জন্য ইলেক্ট্রোকার্ডিয়োগ্রাম বা ECG-ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অংশগ্রহণকারীদের পৃথক রাতে দুটো অবস্থার মুখোমুখি করা হয়েছিল: একটি যেখানে স্বস্তিদায়ক শব্দ বলা হয়েছিল এবং অন্যটি যেখানে নিরপেক্ষ বা নিয়ন্ত্রিত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। শব্দগুলো উপস্থাপন করা হয়েছিল যখন ঘুম খুব গভীর পর্যায় ছিল যা স্মৃতি একত্রীকরণ এবং পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা শব্দ উপস্থাপনার আগে এবং পরে হৃদস্পন্দনের ব্যবধান পরিমাপ করেছেন এবং যখন শব্দ উপস্থাপন হয়নি সেই সময়ের হৃদস্পন্দনের ব্যবধানের বেসলাইনের সাথে তুলনা করেছেন। রাতে স্বস্তিদায়ক শব্দ বাজানো হলে, দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের হৃদস্পন্দন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে যা আবার গভীর ঘুমের ইঙ্গিত দেয়। তাছাড়াও, সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতিটি শব্দের উপস্থাপনার সাথে সাথে হার্টবিট নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল, এবং স্বস্তিদায়ক বা আনন্দদায়ক শব্দ উচ্চারণের সময় হৃদস্পন্দন মডুলেশন উল্লেখযোগ্য ছিল। হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের সূচক তুলনা করে, গবেষকরা বলেন যে হার্টের কার্যকলাপ প্রকৃতপক্ষে ঘুম সম্পর্কিত এমন তথ্য প্রদান করে যা শুধু মস্তিষ্কের মার্কার ধরতে পারে না। ফলত এটি ঘুমের সময় আমাদের হার্ট এবং মস্তিষ্কের মধ্যে আরও জটিল মিথস্ক্রিয়া ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে গবেষকদের মতে এ বিষয়ে আরও অধ্যয়ন প্রয়োজন।