ঘুম জাগানিয়া

ঘুম জাগানিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫

‘ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছেনা’,‘ঘুম আসতেই চায়না’ কিংবা ‘ঘুমের সময় কই’! এরকম নানা অভিযোগ। তবে ঘুমের সমস্যাগুলিকে ‘নিছক অভিযোগ’ হিসাবে দেখলে চলবে না। ‘ঘুমের সমস্যা’ একটি ব্যাপক সমস্যা হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ এবং মহিলাদের মধ্যে। আপনার কম ঘুম, অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে মস্ত যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রমাণ রয়েছে যে ঘুম, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ইমিউন ডিসঅর্ডার এবং আলঝেইমারের সাথে সম্পর্কিত।

ঘুমের সাথে সম্পর্কিত খুব সাধারণ সমস্যাগুলি হল, অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া, যা প্রায়শই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চাপের কারণে ঘটে। স্লিপ অ্যাপনিয়া, যা ঘুমের সময় নিয়মিতভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার জন্য হয়। এটির মূল কারণ আসীন জীবনযাত্রা এবং স্থূলতা। কিছু মানুষের ‘রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম’ও থাকে। অর্থাৎ, ঘুমের মধ্যে তাদের বারংবার পা সরানোর জন্য একটি অপ্রীতিকর তাগিদ অনুভুত হয় এবং ঘুমের মান নষ্ট হয়। সমস্যা আলাদা তাই চিকিৎসা বা থেরাপি আলাদা হওয়াটা দরকার।

স্ট্রেস এবং চাপ রাতের ভালো ঘুমের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। কাজের চাপ, সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা, কিছু সিদ্ধান্ত বা ঘটনা নিয়ে ক্রমান্বয়ে ভেবে চলা। আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই, বিছানায় ওঠার সাথে সাথে আমাদের চিন্তাগুলি আরও যেন মাথার মধ্যে চেপে বসে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, শারীরিক কসরত, ওজন কমানো, চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা বা মন হালকা রাখা, সন্ধ্যায় আবছা আলোর ব্যবহার, ঘুমের নির্দিষ্ট সময়, পরিস্কার আওয়াজহীন ঝিম ধরা পরিবেশ, ঘুমের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।

এছাড়া যুদ্ধ বিধস্ত এলাকা, মহামারী, ভবিষ্যত এর অনিশ্চয়তা ঘুমের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। যেমন, আমরা (লিভার ফাউন্ডেশন, পশ্চিমবঙ্গ) সুন্দরবন এলাকায় একটি সার্ভের সময়, সেখানকার মানুষদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়, মানুষগুলির মধ্যে অনিদ্রা বাড়িয়ে তুলছে, সঙ্গে রয়েছে হতাশা এবং মানসিক চাপ।

তবে এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য, কিছু মানুষ ঘুম নিয়েও অতিরিক্ত চিন্তা করেন। ঘুম “নিখুঁতভাবে” যাতে হয় বা কোন ঘুমের কোন ব্যাঘাত না ঘটে-এই নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে থাকেন। যা বিপরীতে, আসলেই ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। নিখুঁত ঘুমের প্রতি মানুষের বেড়ে চলা এই বদ্ধসংস্কার, অর্থোসোমনিয়া নামে পরিচিত।

ঘুম একটি অভিন্ন প্রক্রিয়া নয় – এটি বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটে। ঘুম মস্তিষ্কের পৃথক অংশে ভিন্নভাবে ঘটে। এর অর্থ হ’ল আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক সর্বত্র একই পরিমাণে সেই ঘুমের অভিজ্ঞতা পায় না। মস্তিষ্কের কিছু অংশ কেন অন্যদের তুলনায় বেশি গভীরভাবে ঘুমায় তা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে। ঘুম নিয়ে এখনও অনেক উত্তরহীন প্রশ্ন আছে। প্রতিটি নতুন খোঁজ, ‘ঘুম’কে আরও ভালভাবে বুঝতে, উন্নতি করতে এবং স্বাভাবিক হতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে, সমগ্র স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + twenty =