বিশ্ব জুড়ে জীবাণুদের অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে-ওঠা এক বিরাট সমস্যা। কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এই কারণে। স্বভাবতই এ নিয়ে চলেছে বিস্তর গবেষণা। বার্সিলোনার সেন্টার ফর জিনোমিক রেগুলেশন-এ ই কোলাই জীবাণু নিয়ে এরকম একটি গবেষণা থেকে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া গেছে কীভাবে এই জীবাণুটি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ পরীক্ষায় ই কোলাই জীবাণুর মধ্যে স্ট্রেপ্টোমাইসিন আর কাসুগামাইসিন (যা উদ্ভিদ রোগ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত) অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকিয়ে দিয়ে অতি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবাণুর প্রতিক্রিয়া নিরীক্ষণ করা হয়েছে। এই দুটি অ্যান্টিবায়োটিকই বিশেষভাবে নিশানা করে জীবাণুটির রাইবোসোমকে। জীবাণু-কোষের মধ্যে উপস্থিত রাইবোসোমের কাজ হল প্রোটিন সংশ্লেষ করা। রাইবোসোম ঘায়েল হলে আর প্রোটিন তৈরি হবে না, জীবাণুগুলো অকেজো হয়ে পড়বে, তখন রোগ সারবে। কিন্তু দেখা গেল নিজেকে বাঁচাবার তাগিদে অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ই কোলাই জীবাণু নতুন নতুন রাইবোসোমের সমাবেশ ঘটাতে শুরু করে। সেগুলো যে আনকোরা নতুন তা নয়, স্বাভাবিক রাইবোসোমগুলো থেকে সামান্যই আলাদা। কিন্তু যে-যে জায়গায় অ্যান্টিবায়োটিক এসে জড়ো হয়ে জীবাণুর প্রোটিন উৎপাদন থামিয়ে দিতে চায়, বেছে বেছে ঠিক সেইসব জায়গায় চড়াও হয়ে এরা ক্রিয়া করে। উলটে তারাই থামিয়ে দেয় অ্যান্টিবায়োটিককে। ফলে জীবাণুর প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজ চলতেই থাকে, জীবাণুটিও ওষুধকে প্রতিরোধ করে দিব্বি বেঁচেবর্তে থাকে। এই গবেষণা থেকে জীবাণুদের টিকে থাকার এবং অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করার এক সম্পূর্ণ নতুন কৌশলের সাক্ষ্য মিলেছে। গবেষক ডক্টর এভা নোভোয়া বলেছেন, “ আশ্চর্য নৈপুণ্যে ঠিক যেসময় যেখানে দরকার তখনই ই কোলাই জীবাণু একেবারে নিখুঁতভাবে তার আণবিক গঠন বদ্লে নেয়। গোপনে, চুপিচুপি তারা অ্যান্টিবায়োটিককে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সূক্ষ্ম উপায় বার করে ফেলে”। তাঁর মতে, “আমরা যদি আরও গভীরে গিয়ে বুঝতে পারি কেন জীবাণুরা এইভাবে নতুন নতুন গঠন তৈরি করছে তাহলে আমরাও এর পালটা কৌশল জারি করতে পারব। সেই নতুন কৌশলে ওষুধগুলো এইসব বদলে-যাওয়া রাইবোসোমগুলোর সঙ্গে আরও কেজো উপায়ে এঁটে থাকতে পারবে”।