বিপর্যয়ের চরিত্র এবং ব্যাপ্তি সব জায়গায় এক নয়। কোথাও খরা, কোথাও ভূমিকম্প আবার কোথাও ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা অনেক বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোয়ান ইউনিভার্সিটি, সিঙ্গাপুরের নানয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং ইউএস-এর ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার গবেষকরা এক সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রান্তীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় এখন উপকূলরেখার কাছাকাছি তৈরি হচ্ছে। এই ঘূর্ণবাত আরও দ্রুত গভীর হচ্ছে, এবং স্থলভাগের উপর দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। হাই ফং, ইয়াঙ্গুন এবং ব্যাংককের মতো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শহরগুলো দীর্ঘস্থায়ী এবং আরও তীব্র ঝড়ের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷
ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় খুবই শক্তিশালী ও ঘূর্ণায়মান ঝড়। উষ্ণ সমুদ্রের জলের উপর তৈরি হওয়া এই ঝড় শক্তিশালী বাতাস এবং ভারী বৃষ্টি নিয়ে আসে। সাধারণত বিষুবরেখার কাছাকাছি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। উষ্ণ সমুদ্রের জল এবং তাপমাত্রা এই ঘূর্ণবাত তৈরি হওয়া ও তীব্র হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তাপ এবং আর্দ্রতা সরবরাহ করে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের পথ পরিবর্তন করে। গবেষকদের মতে বিশ্বজুড়ে, ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রের জলের উষ্ণতার দ্বারা প্রভাবিত হয়। জল যত উষ্ণ হয়, ঝড় তত বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রোয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষক আন্দ্রা গার্নারের মতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলরেখা ঘনবসতিপূর্ণ। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭০%-এরও বেশি উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে এবং ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এরা প্রভাবিত হবে। এর সাথে দোসর হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। এই এলাকায় জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনই বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে হচ্ছে প্রবল বৃষ্টিপাত। বন্যায় বিধ্বস্ত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বাড়ি ঘর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রভাবিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা। বর্তমানে আগে থেকেই ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। নিজেদের প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকেই।