দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ‘হরমোন-সংবেদী লাইপেজ ‘ (এইচ-এস-এল) নামের একটি উৎসেচকের কাজ কেবল শরীরে জমে থাকা চর্বি ভাঙা। কিন্ত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই উৎসেচক শুধু “চর্বি খাদক” নয়। এটি কোষের ভিতরে গিয়ে জিনের কার্যক্রমকেও নিয়ন্ত্রণ করে। এই দ্বৈত ভূমিকা ভবিষ্যতে স্থূলতা ও বিপাক সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় নতুন পথ দেখাতে পারে। চর্বি কোষে (অ্যাডিপোসাইট), এইচ-এস-এল সাধারণত ট্রাইগ্লিসারাইড ভেঙে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, এটি শুধু কোষের তরল অংশে নয়, নিউক্লিয়াসেও সক্রিয় থাকে। এটি এমন সব জিনের উপর প্রভাব ফেলে যা চর্বি কোষের বৃদ্ধি ও শক্তি ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রক। অর্থাৎ, এটি একই সঙ্গে চর্বি ভাঙে এবং কোষে জিন চালনা করে।এইচ-এস-এল-এর এই ভূমিকা ব্যাহত হলে, শরীরে চর্বি কোষ হয় অতিরিক্ত জমে, নয়তো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, “এইচ-এস-এল এখন কেবল চর্বি ভাঙার যন্ত্র নয়, কোষের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রকও বটে। ” তবে খাদ্যাভ্যাস এই উৎসেচকের অবস্থান বদলে দিতে পারে। উপবাসের সময় এটি কোষের তরল অংশে গিয়ে চর্বি ভাঙে। আর বেশি চর্বিযুক্ত খাবারের পর এটি নিউক্লিয়াসে ফিরে গিয়ে জিন নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়। অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভাস ও জীবনযাপন সরাসরি প্রভাব ফেলে এর কার্যক্রমে। এই আবিষ্কার চিকিৎসা-বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যদি বিজ্ঞানীরা এই উৎসেচকের “জিন-নিয়ন্ত্রক ” অংশটিকে লক্ষ্য করে কাজ করতে পারেন, তাহলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য বিপাক ক্রিয়া সংক্রান্ত রোগের জন্য এক নতুন থেরাপি তৈরি করা যেতে পারে। এখনও অবশ্য এই ফলাফল মানুষের শরীরে প্রমাণিত হয়নি। তবু গবেষণাটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
সূত্র : Fat-chomping enzyme that ‘moonlights’ as gene regulator could point to obesity treatments” — Science
