চার দশক ধরে স্বল্প মূল্যের যন্ত্র উদ্ভাবন করছেন আমির হোসেন

চার দশক ধরে স্বল্প মূল্যের যন্ত্র উদ্ভাবন করছেন আমির হোসেন

অর্পন নস্কর
Posted on ১৫ মে, ২০২২

বগুড়ার মহম্মদ আমির হোসেনের পরিচিতি কৃষি যন্ত্র উদ্ভাবক হিসেবেই। গত চার দশক ধরে সস্তায় দেশীয় কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবন করে চলেছেন ক্রমাগত। ১৯৪০ এ আমির হোসেনের বাবা বগুড়ায় তৈরি করেছিলেন কারখানা। শৈশবে বাবার কাছেই ওয়ার্কশপে কাজ শিখেছিলেন আমির। কৈশোরে প্রথম তৈরি করেছিলেন সিমুই তৈরির একটি মেশিন।
আমির হোসেন গত চার দশক ধরে বিভিন্ন কৃষিযন্ত্রকে দেশীয় রূপে তৈরি করেন। তাঁর মূল লক্ষ্য কম খরচে কৃষকদের জন্য যন্ত্র সরবরাহ করা। যেমন আমরা জানি দুই বাংলাতেই কৃষিক্ষেত্রে সেচের ওপর নির্ভর করতে হয়। সারাবছর বৃষ্টির জল তো পাওয়া যায় না, এমনকি খাল বিল পুকুরের জলও সবসময় সেচের জন্যে পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই সেচের জন্যে শ্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমির হোসেন দেশীয় রূপে শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ তৈরি করেছেন। যে যন্ত্রাংশ একসময় আসতো জাপান থেকে। দাম পড়ে যেত বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই হাজার টাকা, আমির হোসেনের উদ্ভাবনে সেই যন্ত্রাংশ বাজারে পাওয়া যায় ৩৫০-৪০০ টাকায়।
তবে আমির হোসেন যে কেবল কৃষি যন্ত্র উদ্ভাবক এমন নয়। নানা শিল্প যন্ত্রও উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর উদ্ভাবিত কয়েকটি মেশিন হলো-
অটো ব্রিক্স মেশিন- স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঘন্টায় ৪-৫ হাজার ইট তৈরি করা যায় এই মেশিনের মাধ্যমে। এই মেশিন চালানোর জন্যে মাত্র ১ জন শ্রমিক লাগবে।
ধান ঝাড়াই মেশিন- এই মেশিনে খুব অল্প সময়ে ধান থেকে চাল ঝাড়াই করে বের করে নেওয়া সম্ভব।
পাথর ভাঙার মেশিন- ১৯৯০ সালে কোরিয়ানরা বাংলাদেশ এসেছিল বিশেষ এক মেশিন নিয়ে। তারই প্রায় কপি করে অনেক কম মূল্যে আমির হোসেন তৈরি করেছিলেন ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন।
অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর- এই মেশিন বাতাস থেকেই অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে। আলাদা করে সিলিন্ডারের প্রয়োজন হবে না।
আমির হোসেন রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন মেশিন তৈরি করেন। রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং বলতে বোঝায়- ধরা যাক কোন একটি যন্ত্র, তা খুলে দেখে তার মেকানিজম বুঝে নিয়ে সেই মেশিনারির কপি করা। বুয়েট থেকে তাঁর মিলেছে এ কাজের স্বীকৃতিও। আমির হোসেনের যন্ত্রগুলির চাহিদাও রয়েছে বিপুল। এই চাহিদার কারণ মূলত যন্ত্র খারাপ হলে দেশীয় টেকনেশিয়ান পাওয়া যায় যন্ত্র সারাইয়ের জন্যে। বিদেশী যন্ত্রে যা অসুবিধাজনক।
বর্তমানে আমির যে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তা হচ্ছে একরকমের যান। যে গাড়ি রাস্তায় চলবে আবার আকাশেও উড়বে। পরিকল্পনা মাফিক এই গাড়ি হবে তিন চাকার। আমির হোসেনের নিজের কথায়, গাড়ির ড্যাস বোর্ড, পাটাতন সবকিছু তৈরির কাজ চলছে। এই গাড়িতে থাকবে এয়ার প্রপেলার সিস্টেম। থাকবে হাইব্রিড ফাংশান। মূলত ইলেক্ট্রিক টার্বাইন দিয়ে সিস্টেম চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 1 =