চিকিৎসাবিজ্ঞান ও গামা রশ্মি ক্যামেরা

চিকিৎসাবিজ্ঞান ও গামা রশ্মি ক্যামেরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চিকিৎসাবিজ্ঞানে আরো এক চমকপ্রদ অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও চীনের সুঝৌ বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে উদ্ভাবন করেছে বিশ্বের প্রথম পেরোভস্কাইট -ভিত্তিক ক্যামেরা। এ ক্যামেরা গামা রশ্মিকে একেবারে আলাদা আলাদা “পিক্সেল” হিসেবে ধারণ করে। ফলে চিকিৎসকেরা শরীরের ভেতরের কার্যকলাপকে আরও স্পষ্ট, দ্রুত ও নিরাপদভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, চিকিৎসকরা শরীরের ভেতরটা দেখতে পারবেন একেবারে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ছবিতে । প্রতিটি কোষের সূক্ষ্ম কার্যকলাপ চোখের সামনে ফুটে উঠবে।
এখন পর্যন্ত ডাক্তাররা রোগ শনাক্তকরণে এস পি ই সি টি স্ক্যান ব্যবহার করেন, কিন্তু এর ডিটেক্টরগুলো বেশ সমস্যাজনক। এতে শরীরে সামান্য রেডিওট্রেসার প্রবেশ করানো হয়, যা গামা রশ্মি নিঃসরণ করে। এসব রশ্মিকে বাইরে থাকা ডিটেক্টর ধারণ করে এবং সেখান থেকে ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি হয়। আবার, সি জেড টি ডিটেক্টর এত দামী যে শুধুমাত্র ব্যয়বহুল হাসপাতালেই এগুলো ব্যবহৃত হয়। এন এ এল ডিটেক্টর তুলনামূলক সস্তা হলেও ছবিতে অস্পষ্টতা থেকে যায়, যেন কুয়াশাচ্ছন্ন ছবি। অর্থাৎ, আধুনিক প্রযুক্তি থাকলেও এতদিন স্পষ্ট ও সাশ্রয়ী ইমেজিং সবার নাগালে ছিল না।
পেরোভস্কাইট হলো বিশেষ ধরনের খনিজের স্ফটিক(CaTiO3), যা আগেই সৌরশক্তি রূপান্তরে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৩ সালে অধ্যাপক মেরকুরি কানাটজিডিস প্রমাণ করেছিলেন যে এই কেলাসটি গামা রশ্মি ও এক্স-রে ধরতে সক্ষম। এবার সেই ধারণাকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাজে লাগিয়ে তৈরি হলো একেবারে নতুন প্রজন্মের ডিটেক্টর।
গবেষকরা এই কেলাসকে সূক্ষ্মভাবে কেটে ছোট ছোট পিক্সেল বানিয়েছেন। এটি কাজ করে মোবাইল ক্যামেরার মতোই। প্রতিটি গামা রশ্মিকে ধরে একেকটি পিক্সেলে রূপান্তর করে। মিলিয়ন মিলিয়ন পিক্সেল একত্রিত হয়ে তৈরি হয় স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ছবি।
পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে যে, এই ক্যামেরা ভিন্ন ভিন্ন শক্তির গামা রশ্মি আলাদা করতে পারে,অতি ক্ষুদ্র তেজস্ক্রিয় উৎসও শনাক্ত করতে পারে,আর আগের যেকোনো ডিটেক্টরের তুলনায় বেশি স্পষ্ট ও স্থিতিশীল ছবি তৈরি করতে পারে।
এর মানে, রোগীদের আর দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্যান করতে হবে না, কিংবা অতিরিক্ত রেডিয়েশন নিতে হবে না। অল্প সময় ও অল্প ডোজেই মিলবে সর্বোচ্চ মানের ছবি।
সবচেয়ে বড় খবর হলো এই প্রযুক্তি ব্যয়বহুল নয়। পেরোভস্কাইট কেলাস সহজে উৎপাদনযোগ্য, তাই দামও সাশ্রয়ী। Actinia Inc. নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এর বাণিজ্যিকীকরণের কাজ শুরু করেছে। ভবিষ্যতে সাধারণ হাসপাতালেও এই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হবে।
বিজ্ঞানীরা আশা রাখেন, যেমনভাবে পেরোভস্কাইট সৌরশক্তির জগতে বিপ্লব এনেছিল, তেমনভাবেই এবার এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা করবে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ পাবে দ্রুততর, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা।

সূত্র: “Single photon γ-ray imaging with high energy and spatial resolution perovskite semiconductor for nuclear medicine” by Nannan Shen, Xuchang He,et.al;(30.08.2025) Nature Communications.
DOI: 10.1038/s41467-025-63400-7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × one =