চিনির বিকল্প পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক

চিনির বিকল্প পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ জুলাই, ২০২৪

চিনি খেলে মোটা হবেন, তাই চায়ে চিনি এড়িয়ে পরিবর্তে কৃত্রিম মিষ্টত্বের পক্ষপাতী? কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন থেকে ল্যাবে চিনির গঠনের অনুকরণে এমন ধরনের বিকল্প কৃত্রিম মিষ্টি তৈরি হয়, যা এখন ধীরে ধীরে বাজার ছেয়ে গেছে। ডায়াবেটিসের রোগীরাও খুশি, চিনি না দিয়েও চা কফিতে কম ক্যালোরিযুক্ত মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে! কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে কৃত্রিম সুইটনার সরাসরি মানুষের অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, কিন্তু এর স্বপক্ষে এখনও সরাসরি সেরকম প্রমাণ নেই। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে কৃত্রিম সুইটনার, সুক্র্যালোজ জলের বাস্তুতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষকরা দেখতে পান যে সুক্র্যালোজের উপস্থিতি নীল-সবুজ শৈবাল বা সায়ানোব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এই শৈবালের সালোকসংশ্লেষের ফলে অক্সিজেন তৈরি হয়, যা সামুদ্রিক পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটা মাছ ও জলজ নানা জীবের খাদ্য।
সাধারণত এই ধরনের কৃত্রিম সুইটনার মানুষের দেহে বিপাক হয় না, শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ হিসেবে নিষ্কাশিত হয়। এই সুটনার থেকে চিনির মতো ক্যালোরি শরীরে প্রবেশ করেনা বলেই এই কৃত্রিম সুটনারগুলোকে কম ক্যালোরিসম্পন্ন বলা হয়। আর এখান থেকেই শুরু পরিবেশের ক্ষতি। বর্জ্যজলের ট্রিটমেন্টে এই কৃত্রিম চিনিদের সরানো সম্ভব হয় না, এগুলো নদীতে, জলে, মাটিতে মিশে যায়। এই সুক্র্যালোজ চিরস্থায়ী একটা রাসায়নিক যা অবিরাম দূষণ ঘটায়। কারণ ব্যাকটেরিয়া এর পচন ধরাতে পারেনা। তাহলে সুক্র্যালোজ খাদ্য শৃঙ্খলে প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে, আমাদের জল ব্যবস্থা এবং বিস্তৃত পরিবেশে সুক্র্যালোজ নিঃসৃত হলে সুষম বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হতে পারে। ২০১৯ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল সুক্র্যালোজের উপস্থিতি ডিএনএ-র ক্ষতি করতে পারে এবং কার্পের মতো মিষ্টি জলের মাছের জেনেটিক মিউটেশন ঘটাতে পারে।
চিরস্থায়ী রাসায়নিকগুলোর উপস্থিতি আমাদের নদী মহাসাগরে ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে। বিশেষত পার ও পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ (পিএফএএস) যার ক্ষয় হয় না। পিএফএএস একধরনের কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ যা ত্বকের প্রসাধনী ও অন্য প্রসাধনীতে, জলরোধী পোশাক সহ নানা পণ্যে পাওয়া যায়। পিএফএএস বহু বছর ধরে মানবদেহে থাকতে পারে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকির কারণ। এর থেকে লিভারের ক্ষতি, থাইরয়েড রোগ, স্থূলতা, বন্ধ্যাত্ব এবং ক্যান্সার হতে পারে। কৃত্রিম সুইটনারগুলো পিএফএএস-এর মতোই আচরণ করে, কারণ তাদের প্রাকৃতিকভাবে ভাঙা যায়না। তাহলে বর্জ্য জল থেকে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে নিষ্কাশন করা প্রয়োজন। এরজন্য কোশের জৈবপর্দার অনুকরণে, পরিস্রুত করার পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার যা জল থেকে বেছে বেছে যৌগ নিষ্কাশন করতে পারবে। এই ধরনের কৃত্রিম বিকল্প চিনি মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কিনা প্রমাণিত না হলেও পরিবেশের পক্ষে যে বিষ তা এই গবেষণায় প্রমাণিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × one =