‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ ও ব্যাকটেরিয়া-বিপ্লব

‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ ও ব্যাকটেরিয়া-বিপ্লব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত খাদ্য সামগ্রী এবং পণ্যের মধ্যে কিছু অত্যন্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকে । আমাদের দেহ, এই পদার্থগুলিকে হজম করতে পারে না। অপরদিকে, প্রকৃতিও এগুলিকে ভাঙতে,পাল্টাতে কিংবা ধ্বংস করতে অক্ষম। দীর্ঘ বছর ধরে এরা একইরকম থেকে যায়। এগুলি ‘ফরেভার কেমিক্যাল’ বা চিরস্থায়ী রাসায়নিক নামে চিহ্নিত। ১৯৫০ এর দশক থেকেই ননস্টিক কুকওয়্যার, ওয়াটারপ্রুফ পোশাক, অগ্নি নির্বাপণ, প্রসাধনী, পণ্য, খাবার প্যাকেজিং প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে এইসব চিরস্থায়ী রাসায়নিক ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে এগুলিকে ধ্বংস করা মোটেই সহজ কাজ নয়। তবে, সম্প্রতি বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা আশার আলো দেখিয়েছে। এইসব চিরস্থায়ী রাসায়নিক ধ্বংস করতে অদ্ভুত এক ‘সহায়ক’-এর খোঁজ মিলেছে – ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি ‘এফ ১১’। পর্তুগালের দূষিত শিল্পাঞ্চলে এদের বাস । অত্যন্ত দূষিত পরিবেশ এদের বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ। আশেপাশের রাসায়নিক ও দূষণকারী পদার্থগুলিকে তারা ‘খাবারের উৎস’ হিসেবে ব্যবহার করে। এই রাসায়নিকগুলির নামের সাথে যুক্ত ‘চিরস্হায়ী’ শব্দটি সরিয়ে ফেলা গবেষকদের প্রাথমিক লক্ষ্য। আপাতত এই গবেষণার মূল বিষয়- এফ ১১ ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে পেরোফ্লুরোনেট সালফোনিক অ্যাসিড বা পি এফ ও এস ধ্বংস করা। এটি ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিকগুলি’র মধ্যে সবথেকে দীর্ঘস্থায়ী এবং বিপদজনক। পরীক্ষা করবার উদ্দেশ্যে ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তারের জন্য সীল করা ফ্লাস্কে তাদের রেখে দেওয়া হয় ১০০-১৯৪ দিন। লক্ষ্য করা যায়, ব্যাকটেরিয়া কার্বন-ক্লোরিন বন্ধন কেটে ফেলেছে। শুধুমাত্র ছোট ছোট টুকরোয় কেটে ফেলা নয়, সেখান থেকে ফ্লোরিন অপসারণ করতেও এরা বেশ পটু। অর্থাৎ, শুধুমাত্র ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক পদার্থ’ খাওয়া নয়, হজমও করে ফেলছে এরা। গবেষক আগা বলেছেন, “এফ ১১-এর বসতি বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে খাবার মজুত থাকতে হবে। অন্যদিকে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে, ব্যাকটেরিয়া যাতে অন্যান্য রাসায়নিককে নিজেদের খাদ্য উৎস না বানিয়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে চিরস্থায়ী রাসায়নিকগুলিকে রূপান্তরের কাজে এরা উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবে।” পরিবেশগত ও স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এই গবেষণা একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, তা বলা-বাহুল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + three =