চোখের জল শুধু ফেলার জন্য নয়

চোখের জল শুধু ফেলার জন্য নয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌।
Posted on ১৪ আগষ্ট, ২০২২

চোখের জল কোনও দিক থেকেই ভাল হতে পারে না। তাই তো গুরুজনেরা বলেন, অকারণে চোখের জল ফেলতে নেই! কিন্তু, কারণেও কি চোখের জল ফেলতে হয়? কেউ তো আর শখ করে কাঁদেন না, আবার আনন্দেও কাঁদেন না। কান্না আসে দুঃখে বা অতি আনন্দে। কখনও আবার পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে গিয়ে চিকচিক করে ওঠে দু’চোখের নিচ দুটো। কিন্তু চোখের জল কি কোনও কাজে লাগে? বৃষ্টির জল ধরে রেখে আজকাল অনেক কিছুই হচ্ছে। মানুষের মূত্র দিয়ে চিকিৎসাও হয়। কিন্তু চোখের জল কোনও কাজে লাগে, এমন তো নিশ্চয়ই কখনও শোনেননি। বিজ্ঞানীরা এবার সেই কাজটাই করে ফেলেছেন। কাজে লাগিয়ে ফেলেছেন চোখের জল। বিজ্ঞানীরা এবং কয়েক ফোঁটা জলের সাহায্যে মানব শরীরের রোগ সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
চিনের ওয়েনঝউ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক এহেন অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফেই লিউ বলছেন, “রোগ সনাক্তকরণের জন্য আমরা চোখের জল কতটা কার্যকর হতে পারে, তা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম।” গবেষণায় এমনই আশাব্যঞ্জক দিক দেখা গিয়েছে যে, একদিন মানুষের পুরো শরীরটা পরীক্ষা করার জন্য কেবল কয়েক ফোঁটা চোখের জল হলেই চলে যাবে। ফেই লিউ বললেন, এমন একটা দিন আসবে যখন মানুষ নিজেই নিজের চোখের জল পরীক্ষা করে শরীরের রোগগুলি ধরতে পারবেন।
লালা এবং প্রস্রাবের মতোই অশ্রুতে সেলুলার মেসেজে পরিপূর্ণ কিছু ক্ষুদ্র থলি থাকে। যদি বিজ্ঞানীরা এই মাইক্রোস্কোপিক মেলব্যাগগুলিকে আটকাতে পারেন, তাহলে তাঁরা শরীরের ভিতরে কী ঘটছে, সে বিষয়ে বুঝতে পারবেন। কিন্তু এক্সোসোম নামে পরিচিত এই থলিগুলি যথেষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ করা কঠিন। শরীরের অন্যান্য অংশের তরলের থেকে অনেকটাই আলাদ চোখের জল, তার ভিতরে থাকা ক্ষুদ্র থলিগুলি সংগ্রহ করতে অনেক কাঠখড়ই পোড়াতে হয়।
সেখানেই একটি কৌশল অবলম্বন করেন ফেই লিউ এবং তাঁর এই গবেষণা দলটি। তাঁরা চোখের জলের ক্ষুদ্র ভলিউম থেকে থলিগুলি ক্যাপচার করার জন্য একটি নতুন উপায় বের করেছেন। প্রথমে গবেষকরা এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে অশ্রু সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর তাঁরা দুটি ন্যানোপোরাস মেমব্রেন-সহ একটি ডিভাইসে অশ্রুযুক্ত একটি দ্রবণ যোগ করেন, যা ঝিল্লি কম্পিত করে এবং দ্রবণটি চুষে নেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৌশলটি ছোট অণুগুলিকে পালাতে সাহায্য করে এবং বিশ্লেষণের জন্য থলিগুলিকে পিছনে ফেলে দেয়।
ফলাফল যা দাঁড়ায়, তাতে অবাক হয়ে যান গবেষকরা। তাঁরা লক্ষ্য করেন, বিভিন্ন ধরনের শুষ্ক-চোখের রোগ মানুষের চোখের জলে তাদের নিজস্ব আণবিক আঙুলের ছাপ ফেলে। তার থেকেও বড় কথা হল, একজন রোগীর ডায়াবেটিস কীভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তা নিরীক্ষণ করতে ডাক্তারদের সাহায্য করতে পারে চোখের জল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + 4 =