চোখের তারা তুই

চোখের তারা তুই

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ জুলাই, ২০২৪
চোখের-তারা

মাথায় ঘুরছে ‘ডাস্ট ইট অফ’ গানটা। সায়েন্স ফিকশন এর আধারে তৈরি সিনেমা – আই অরিজিনস। চোখ আমাদের আত্মার আত্মীয় – মনের আয়না। সিনেমার মূল চরিত্র বিজ্ঞানী ইয়ান। তাঁর প্রবল বিশ্বাস মানুষের ব্যক্তিত্বের মূল চাবিকাঠি: চোখের তারা বা আই বল। প্রতিটি চোখ কি অনন্য? অথবা একই রকম? সেই নিয়েই পুরো ছবিটা একটা নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে তোলপাড় করে দিয়েছিল অডিয়েন্সের মন।

সম্প্রতি সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডসের বাস্তবের গবেষকরা দেখেছেন, প্রতিটি শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সাথে পিউপিল বা চোখের তারার আকার পাল্টে যায়। বিগত ১০০ বছরে আমরা জানতাম, চোখের তারা আলোয় প্রতিক্রিয়া দেখায়। তবে আমাদের শ্বাসের সাথে এটি ছোট বা বড় হয় কিনা তা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। ২০২২ সালে বলা হয়েছিল এই ঘটনার সাপেক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তাই সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের স্নায়ুবিজ্ঞানীরা আগের গবেষণার সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। দলটি ১০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর চোখের তারার আকার পরিমাপ করার জন্য একটি বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের শ্বাস নেওয়ার সাথে সাথে পিউপিল প্রসারিত হয়। চোখের তারার আকার যখন ছোটো থাকে তখন কেউ বিশদে কোন বিষয় বা বস্তুকে দেখতে পারেন। অন্যদিকে যখন তারার আকার বড়ো হয় তখন চোখ, দুর্বল উদ্দীপনাও শনাক্ত করতে পারে।
এই পরীক্ষা, অংশগ্রহণকারীদের চোখের দুটি অবস্থার উপর পরীক্ষা চালান- বিশ্রামের সময় আর কোন কিছু দেখে কাজ করার সময়। প্রতিবেদনে গবেষকরা জানান চোখের তারার আকার শ্বাস নেওয়ার শুরুতে সব থেকে ছোটো এবং শ্বাস ছাড়ার সময় সর্বোচ্চ হচ্ছে। গবেষকরা শ্বাস প্রক্রিয়ার সাথে পিউপিলের এই সম্পর্ক অনুসন্ধানে উঠে পড়ে লেগেছেন।
চোখের তারার ভিতরে উঁকি দিয়েই কোন চিকিৎসক, আমাদের কল্পনা শক্তি থেকে শুরু করে শ্রবণশক্তি হ্রাসের প্রাথমিক লক্ষণ পর্যন্ত দেখেন। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে চোখের তারার আকার ভিন্ন ভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়। ভয়ে প্রসারিত হয়, শারীরিক উত্তেজনা এবং অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের মতো ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বড়ো হয়। তাই এর আচরণ সম্পর্কে আরও জানা প্রয়োজন। চিকিত্সকরা আমাদের চেতনার মাত্রা পরিমাপ করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা শনাক্ত করতে পিউপিলের আকার নির্ণয় করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে শক্তিশালী ডায়গনিস্টিক সূচক হিসেবে এই গবেষণা ব্যবহার করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে চোখের তারার আকারের এই সম্পর্ক আবিস্কার করতে পারলেও এর মূল কারণ আজও রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + eleven =