বিবর্তনবাদকে যাঁরা প্রশ্ন করেন, আলোচনার বিষয় হিসেবে তাঁরা চোখকেই নিশানা করেছেন। স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের পথেই যে মানুষের চোখের পরিবর্তন ঘটেছে – ডারউইন স্বয়ং ভিত্তিহীন ব’লে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন গবেষণাপত্রে ডারউইনের এই হেঁয়ালির সুরাহা দিচ্ছেন ইএমবিএলের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বিশদে ব্যাখ্যা দিয়েছেন কিভাবে বিবর্তনের ইতিহাসে স্থান পেয়েছে মানুষের চোখের ক্রমপরিবর্তন।
প্রধান কার্যনির্বাহী গবেষক ডেটলেভ আরেন্ডট ও জোশেন উইনব্রট খুঁজে পেয়েছেন – আমাদের চোখে অবস্থিত রড ও কোণ নামক আলোকসংবেদী কোষের, যাদের অপ্রত্যাশিত বিবর্তনে জন্ম হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কে থাকা কিছু আলোকসুবেদী কোষের থেকে।
মস্তিষ্ক থেকেই যে মানুষের চোখের উদ্ভব তা আদৌ আশ্চর্যজনক নয়, বরং এখনও আমাদের মগজে এই ধরণের কোষ বিদ্যমান, যারা আলোকরশ্মি চিনতে পারে এবং সেই অঙ্কেই দৈনন্দিন কাজের ছন্দ বজায় রাখতে সক্ষম হয়, উইনব্রট ব্যাখ্যা করছেন এমনই। তিনি আরও যোগ করেছেন, বেশ স্বাভাবিকভাবেই তাই মস্তিষ্কের কোষগুলি থেকেই অনুরূপ কোষ চোখেও সৃষ্টি হয় এবং বিবর্তনের পরবর্তী পর্যায়গুলিতে দৃষ্টি উপলব্ধির ক্ষমতা সে অর্জন করে।
দুই ধরণের আলোকঅনুভূতিশীল কোষের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন আমাদের প্রাথমিক পূর্বপুরুষদের মধ্যে – র্যাবডোমেরিক ও সিলিয়ারী, অধিকাংশ প্রাণীদেহেই এই র্যাবডোমেরিক কোষগুলি চোখের অংশ হয়ে ওঠে আর মস্তিস্কেই থেকে যায় সিলিয়ারী কোষ। কিন্তু মানুষের চোখের ক্ষেত্রে বিবর্তন বেশ অদ্ভুতুড়ে – দৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত সিলিয়ারী কোষ থেকেই ক্রমান্বয়ে রেটিনার রড ও কোণ কোষের সৃষ্টি।
সুতরাং, কিভাবে ইএমবিএলের গবেষকগণ চোখের বিবর্তনের রাস্তাটা দেখতে পেলেন?
জীবন্ত জীবাশ্মদের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর সময়ে, ৬০০ মিলিয়ন বছর পুরনো এক সামুদ্রিক প্রজাতির উত্তরপুরুষ –প্ল্যাটিনের্যেস ডুমেরিল্যি নামক সামুদ্রিক কৃমির সন্ধান পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। জর্মনীর মেইঞ্জ ইউনিভার্সিটির গবেষক আদ্রিয়ান ডোরেস্টেন এই কৃমির মাথার অংশটি নিয়ে পরীক্ষা করেন পরে।
তাঁর মতে, মানুষের চোখের রড ও কোণ কোষের মতোই কৃমিটির মগজের কোষগুলি – তৎক্ষণাৎ আমার মাথায় আসে যে, এই আলোক প্রতিক্রিয়াশীল কোষগুচ্ছের বিবর্তনীয় উৎস হয়তো একই।