চোখে দেখেই ভয়

চোখে দেখেই ভয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌।
Posted on ১৯ জুলাই, ২০২৩

কোনো ভয়ের সিনেমা দেখে আপনি কী আপনার চোখ ঢেকে রাখেন? অথবা হঠাৎ একটা মাকড়সা দেখে আপনি কী দৌড়ে পালিয়ে যান? যে কোনো ভয়ের জিনিস দেখলে হয়তো আমরা এইরকমই করে থাকি। প্রাণীরাও এর অন্যথা নয়। কিন্তু ভয় পেয়ে অন্যদিকে তাকানো বা ভয়ের জিনিস দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া আমরা কীভাবে করি? গবেষকদের মতে এর কারণ হল মস্তিষ্কের একগুচ্ছ নিউরন যা ভয় পাওয়ার সময় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণা অনুসারে, মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে এক গুচ্ছ নিউরন রয়েছে যা আমাদের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে সাহায্য করে। ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স হল মস্তিষ্কের প্রাধান কর্টিকাল অঞ্চল যা রেটিনা থেকে চাক্ষুষ তথ্য গ্রহণ করে, সংহত করে এবং প্রক্রিয়া করে। গবেষকরা দেখেছেন যে ফলের মাছি ড্রসোফিলার মস্তিষ্কে, এই নিউরন থেকে ট্যাকিকিনিন নামে এক রাসায়নিক নির্গত হয় যা সম্ভাব্য ভয়ের উৎস থেকে মাছিকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে সাহায্য করে। মাছির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্রুট ফ্লাইয়ের উপর করা এই গবেষণা ভবিষ্যতে ভীতিকর পরিস্থিতিতে মানুষের প্রতিক্রিয়া আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে, এমনটাই গবেষকদের মতামত। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসাতো সুজি বলেছেন যে তারা ড্রোসোফিলার মস্তিষ্কে একটি নিউরোনাল মেকানিজম আবিষ্কার করেছেন যা থেকে বোঝা যায় ভয় পেলে মাছিরা কীভাবে তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। দেখা গেছে যে ২০ থেকে ৩০ টি নিউরনের একটি একক ক্লাস্টার রয়েছে যা ভয় পাওয়া মাছির দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু ভয় মানুষ সহ সমস্ত প্রাণীর দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে, তাই তারা যে প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন তা সম্ভবত মানুষের মধ্যেও সক্রিয়।
গবেষকের দল মাছিদের চলাফেরার রাস্তায় তাদের ভয় দেখানোর জন্য ফুঁ দেওয়ার মতো হাওয়া দিয়ে দেখেন যে মাছিদের চলাফেরার গতি বেড়ে যায়। তারা একটি নিরাপদ রাস্তা বেছে নেয় যাওয়ার জন্য। এরপরে গবেষকরা একটি মাকড়সার আকার ছোটো কালো বস্তু, মাছিটির যাওয়ার রাস্তার ৬০ ডিগ্রি ডান বা বাঁ দিকে রেখেছিলেন। বস্তুটি নিজে থেকে আচরণে কোনো পরিবর্তন না আনা সত্বেও মাছিরা বস্তুটির দিকে না তাকিয়ে উড়ে যায়। পরবর্তী ক্ষেত্রে গবেষকরা কিছু মাছির নিউরোনের ক্রিয়াকলাপে পরিবর্তন এনে দেখেন যে পরিবর্তিত মাছিরা ফুঁ-এর মতো হাওয়া দেওয়া রাস্তা এড়িয়ে চললেও তারা কালো বস্তুটি এড়িয়ে যাচ্ছেনা। এই ঘটানার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে ট্যাকিকিনিন নামের রাসায়নিক নিঃসরণের কারণেই মাছি ওই কালো বস্তুর দিকে না তাকিয়ে উড়ে যাচ্ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 3 =