চ্যাট জিপিটি : শুধুই তোতাপাখি?

চ্যাট জিপিটি : শুধুই তোতাপাখি?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

চ্যাট-জিপিটি বা ওই জাতীয় প্রোগ্রামের ক্ষমতা ঠিক কতটা তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সংশয় আছে। এর সমালোচকরা বলেছেন, ‘এগুলো সম্ভাবনা-তত্ত্বভিত্তিক তোতাপাখি’ ছাড়া আর কিছু নয়। এর মধ্যে সৃষ্টিশীলতা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে সৃষ্টিশীল মৌলিকতাকে কীভাবে মাপা যাবে তা নিয়ে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা দুটো রাস্তা গ্রহণ করেছেন। এক হল অন্য একটা কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে চিন্তচৌর্যর (প্লেজিয়ারিজম) লক্ষণ খুঁজে বার করা। তবে তাঁরা একথাও বলেন, চিন্তাচৌর্য না থাকলেই সেটা সৃষ্টিশীল মৌলিকতার লক্ষণ বলে গণ্য হবে না। দ্বিতীয় পথটা হল, কৃবু যা রচনা করছে মানুষকে দিয়ে সাবলীলতা আর মৌলিকত্বর নিরিখে তার মূল্য বিচার করিয়ে নেওয়া। কিন্তু এ বিচার আত্মগত হতে বাধ্য, তাছাড়া সময়সাপেক্ষও বটে। এ সমস্যার নিরসনে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী শিমিং লু ও তাঁর সহযোগীরা ‘ডিজে সার্চ’ নমে একটা প্রোগ্রাম বানিয়েছেন যাতে বিষয়মুখিতা (অবজেকটিভিটি) আর সূক্ষ্মতা দুটোই আছে। কৃবু যা কিছু উৎপাদন করছে এবং সন্ধান করছে, অনলাইন ডেটাবেস থেকে তার ন্যূনতম মাত্রার নমুনা সংগ্রহ করা এর কাজ। কেবল কোন শব্দটার সঙ্গে কোনটা মিলে যাচ্ছে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে এই নতুন প্রোগ্রামটি সেইসব শব্দমালাকে স্ক্যান করে যার অন্তর্গত শব্দগুলোর অর্থ এক। একটা শব্দ কিংবা শব্দবন্ধর অর্থ যাচাই করবার জন্য এই প্রোগ্রামটি আবার অন্য একটা অ্যলগোরিদমের ওপর নির্ভর করে। সেই অ্যালগোরিদমটি একগুচ্ছ সংখ্যার জন্ম দেয়, যার নাম এমবেডিং। যে-পরিপ্রেক্ষিতে শব্দগুলো সচরাচর ব্যবহৃত হয় মোটামুটিভাবে সেই পরিপ্রেক্ষিতের প্রতিনিধিত্ব করে এই সংখ্যাগুচ্ছ। সমার্থবোধক শব্দগুলি সংখ্যাগত দিক থেকে খুব কাছাকাছি। যেমন যেসব শব্দবন্ধে ‘প্রত্যাশা’ আর ‘উত্তেজনা’ শব্দদুটি বদলাবদলি হয় সেগুলিকে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে করা হয়। এই সাদৃশ্যপূর্ণ শব্দগুলি বাদ দেওয়ার পর প্রোগ্রামটি মূল রচনার দৈর্ঘ্যের সঙ্গে বাকি শব্দগুলোর অনুপাত নির্ণয় করে। সেই অনুপাত বলে দেবে কৃবু-র তৈরি রচনাটি কতখানি মৌলিক। গবেষকরা প্রকাশিত উপন্যাস, কবিতা এবং ভাষণের সঙ্গে সাম্প্রতিক লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের লিখিত ভাষ্যগুলির তুলনা করে দেখেছেন। দেখা গেছে, মানুষের রচনা কৃবু-র রচনা থেকে বেশি নম্বর পেয়েছে: কবিতায় ৮০%, উপন্যাসে ১০০% এবং ভাষণে ১৫০%। এর পর গবেষকরা শুধু ছোটো ছোটো শব্দমালা নয়, গোটা আখ্যানটিকে বিশ্লেষণ করে অভিননবত্ব বিচার করবেন । ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী নাইয়ুন ভায়োলেট পেং হাতে করে সেকাজ করে দেখেছেন যে কৃবু-র রচিত আখ্যানগুলি নিকৃষ্ট মানের। এইবার তিনি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই বিচারের কাজ করতে চলেছেন। কাজটি নিঃসন্দেহে কঠিন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। পেং বলেছেন, ‘লেখার কাজে এগুলো মানুষকে সাহায্য তো করতে পারবে, যার ফলে মানুষ ধরাবাঁধা অভিব্যক্তিগুলো তো এড়াতে পারবে’।

সূত্র: doi: 10.1126/science.zg4e4pe