
আমাদের নিত্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক ভবিষ্যতে ব্যথানাশক ওষুধে পরিণত হতে পারে। এমনই চমকে দেওয়া আবিষ্কার করলেন ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরার গবেষক স্টিফেন ওয়ালেস এবং তাঁর দল। নেচার কেমিস্ট্রি-তে প্রকাশিত এক গবেষনাপত্রে বলা হয়, এক অতি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ই কোলাই-এর জিন রূপান্তর করলে, তারা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে প্যারাসিটামলের মতন ব্যাথানাশক ওষুধ তৈরি করতে সক্ষম। প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেন বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ব্যথা ও জ্বরের ওষুধগুলির মধ্যে একটি। সাধারণত এটি তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি রাসায়নিক। কিন্তু এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিক বর্জ্য, বিশেষ করে পলিথিন টেরেফথ্যালেট (PET) থেকে ওষুধের মূল কাঁচামাল প্রস্তুত করেন। এটি খাবারের প্যাকেট ও কাপড়ে ব্যবহৃত হয়। প্রথম ধাপে, পলিথিন টেরেফথ্যালেটকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে এক অণুতে পরিণত করা হয়। তারপর সেই অনুকে ই কোলাই-এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হলে সেখানে এক বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া ঘটে, যার নাম লসেন পুনর্বিন্যাস। এ এক সাবেকি সনাতন রাসায়নিক বিক্রিয়া যার মাধ্যমে হাইড্রোক্সামিক অ্যাসিড থেকে আইসোসায়ানেট তৈরি হয়। এই বিক্রিয়াটি সাধারণত ঘটে তাপ বা রাসায়নিক সক্রিয়কারী পদার্থর উপস্থিতিতে। এটি প্রায়ই অ্যামিন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কারণ আইসোসায়ানেট জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামিনে পরিণত হতে পারে। এই বিক্রিয়া সাধারণত কোষের জন্য বিষাক্ত পরিবেশে ঘটে, কিন্তু এখানে তা জীবন্ত কোষের মধ্যেই ঘটেছে। গবেষকরা জিন প্রযুক্তির সাহায্যে ই কোলাই-র মধ্যে এমন উৎসেচক তৈরির ক্ষমতা ঢুকিয়ে দেন, যেগুলো ‘লসেন পুনর্বিন্যাস ‘-এর পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন করতে পারে। ফলে প্লাস্টিকের টুকরো খেয়ে, এই জিন-পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়াগুলির ৯২% প্যারাসিটামলে রূপান্তর ঘটায়। স্টিফেন ওয়ালেস বলেন, “এই কাজ কেবল রসায়ন বা কেবল জীববিদ্যার পক্ষে সম্ভব হতো না। আমরা দুটিকে মিলিয়েই এটি করতে পেরেছি।” ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা মারফত তারা এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে আনার চেষ্টা করছেন। অবশ্য গবেষক ডিলান ডোমাইল সতর্ক করে জানান, প্লাস্টিক থেকে লসেন সাবস্ট্রেট বা অধস্তর তৈরি করার প্রক্রিয়াটির সাহায্যে বড় মাপে উৎপাদন করার ক্ষেত্রে এখনও অনেক সমস্যা। তবে ওয়ালেসের দাবি, উৎসেচক পদ্ধতির মাধ্যমে এটি অনেক বেশি পরিমাণে তৈরি করা যেতে পারে। এই গবেষণা ভবিষ্যতের এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আবর্জনার স্তূপই হতে পারে পরবর্তী প্রজন্মের ওষুধের উৎস।