শৈশবে পাছায় চাপড় খাওয়া (স্প্যাঙ্কিং), প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে – এমনই সামনে এসেছে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায়।
মিশিগান ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল ওয়ার্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপকদ্বয়, অ্যান্ড্রিউ গ্রোগান-কেলর ও শাওনা লি এই গবেষণার মুখ্য পরিচালকবৃন্দ। অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, মাঝারী থেকে ব্যাপক মাত্রায় মদ্যপান বা বেআইনি মাদকের ব্যবহার – শৈশবাবস্থায় স্প্যাঙ্কিং-এর মাশুল গুনতে হয় বয়স বাড়লে।
অধ্যাপক গ্রোগান-কেলর এই আপাতসামান্য আঘাতকেও শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে রাখতে চান। তাঁর মতে, এই তথ্য বয়ঃপ্রাপ্তদের মানসিক পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
যদিও, আভিধানিকভাবে স্প্যাঙ্কিং মানে যন্ত্রনা দেওয়ার প্রত্যক্ষ ইচ্ছে ব্যতিরেকে শুধুমাত্র শিশুর আচরণ সংশোধনের স্বার্থেই তাকে হালকা আঘাত করা।
সমস্তরকম শারীরিক নির্যাতনেই, বলপ্রয়োগ এবং বিহিত দণ্ডের সম্পর্ক থাকে, যা পরে গিয়ে মনোবিকারের সৃষ্টি করতে পারে। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, তাহলে কি স্প্যাঙ্কিং কেবলই শিশুদের মন্দ অভিজ্ঞতা ? যদিও, এর সাথে জড়িয়ে আছে কদুক্তি, উপেক্ষা, বাড়ির ঝামেলা ( যেমন বিবাহবিচ্ছেদ বা থমকে যাওয়া সম্পর্ক ) ।
সিভিসি-কাইসার এসিই সমীক্ষার তথ্য এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯-৯৭ বছর বয়সী ৮৩০০ জনেরও বেশী মানুষকে নিয়ে সমীক্ষাটি হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা বহির্বিভাগে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার সময়েই নিজস্ব রিপোর্ট তৈরি করেন। তাদের জীবনের প্রথম ১৮ বছরে তারা প্রায়শই স্প্যাঙ্কিং-এর শিকার হয়েছেন কিনা, জিজ্ঞেস করা হয়েছিল । তাদের বাড়ির তদানীন্তন পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয় – প্রাপ্তবয়সীরা শারীরিক নির্যাতন করেছেন কিনা ?
সমীক্ষার তথ্য বলছে, তাদের মধ্যে ৫৫% মানুষকেই এই নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে ছোটবেলায়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা’ই বাল্যকালে স্প্যাঙ্কিং-এর শিকার বেশী হয়েছে। আবার, শ্বেতাঙ্গদের থেকে সংখ্যালঘু কৃষ্ণাঙ্গদেরই (এশিয়ানদের বাদ রেখে)স্প্যাঙ্কিং-এর কঙ্কর অভিজ্ঞতা অধিক।
মানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ট্রেসি আফিফি’র মতে, শিশু নির্যাতনের প্রতিকারের আগে অমানবিক লালনপালন’কে থামানো উচিৎ।
“বাবা-মা কে নিয়ে প্রমাণভিত্তিক কর্মসূচী নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে নীতি প্রণয়ন করে আটকানো হোক প্রাথমিক বৈরভাব এবং সম্পর্কিত ঝুঁকির ব্যাপারটাও”, বলছেন প্রোফেসর লি।