
এই বছরের শেষের দিকে প্রাগ শহরে মানুষের প্রাচীন প্রজন্মের ৩১ লক্ষ ৮০ হাজার বছর বয়সী পূর্বমানবী লুসি প্রথমবারের মতো ইউরোপে প্রদর্শিত হতে চলেছে। এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ার বিজ্ঞানীরা অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস নামক এক আদি পূর্বমানবীর দেহাবশেষ উদ্ধার করেন। এর চেয়ে পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল আর পাওয়া যায়নি। “লুসি” নামে পরিচিত এই কঙ্কালটির আবিষ্কার ছিল এক বৈপ্লবিক ঘটনা। এটি মানুষের পূর্বপুরুষ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা আমূল বদলে দেয়। এখন প্রথমবারের মতো লুসির কঙ্কালের টুকরোগুলি ইউরোপে প্রদর্শিত হবে ইথিওপিয়ার জাতীয় সংগ্রহশালা থেকে বিশেষ ঋণ করে। সাধারণ মানুষ প্রাগের জাতীয় সংগ্রহশালায় ‘মানব উৎপত্তি এবং জীবাশ্ম’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে এটি দেখতে পারবেন। দুই মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীটি ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে। সেই সঙ্গে দেখা যাবে সেলাম নামক এক শিশু অস্ট্রেলোপিথেকাসের জীবাশ্ম যার বয়স
লুসির থেকে প্রায় এক লক্ষ বছর বেশি। এটি ওই একই জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল। জনসাধারণ এবং গবেষকরা এই গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্মগুলি কাছ থেকে দেখার বিরল সুযোগ পাবেন । লুসির দেহাবশেষের মধ্যে রয়েছে মাথার খুলির টুকরো,জীবাশ্মযুক্ত দাঁতের কিছু অংশ, শ্রোণীর অংশ এবং কঙ্কালের অন্য কিছু অংশ । ১.১ মিটার লম্বা , ২৯ কিলোগ্রাম ওজনের লুসির জীবাশ্ম কঙ্কালটি শেষবার ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে মার্কিন জাদুঘর পরিদর্শনের সময়
ইথিওপিয়া ত্যাগ করেছিল।
লুসি একটি হোমিনিড। বিটলসের গান “লুসি ইন দ্য স্কাই উইথ ডায়মন্ডস” থেকে এর নামকরণ হয়েছিল। সে দুই পায়ে হাঁটত এবং প্রায় ১১-১৩ বছর বয়সে মারা যায়। ২০১৬ সালে আরও বোঝা গেছে যে লুসির শক্তিশালী বাহু ছিল। যা থেকে বোঝা যায় সে নিয়মিত গাছে চড়ত এবং রাতে ডালে বাসা বাঁধত। তার পা তুলনামূলকভাবে দুর্বল যা ওপরে ওঠার জন্য ব্যবহৃত হত না এবং হাঁটার জন্য অক্ষম ছিল। একই বছর লুসির একটি হাড়ের ফাটল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে সম্ভবত লম্বা গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়। লুসিকে একসময় মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন পূর্বমানবী মনে করা হত। তবে ১৯৯৪ সালে যখন একই দেশ ইথিওপিয়ায় মানুষের আরেক পূর্বপুরুষ ‘আর্ডি’ আবিষ্কৃত হয়, তখন ধারণা বদলে যায়। আর্ডি লুসির চেয়ে অনেক বড়, সে ৪৫ লক্ষ বছর আগে বেঁচে ছিল।