গ্রিনল্যান্ডের মেরু ভাল্লুকের সংখ্যা মূল্যায়ন করার সময় গবেষকদের এক অদ্ভুত ঘটনা চোখে পড়ে। ভেজা তুষারের কারণে তাদের পায়ের মাংসল থাবায় এমন ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে যাতে তুষার আটকে জমা হয়ে থাকছে। সারা বিশ্বে জলবায়ুর চোখরাঙানির জেরে আর্কটিক অঞ্চলে বরফ গলে যাচ্ছে। আরও ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উষ্ণ তাপমাত্রার কারণেও ভূপৃষ্ঠের তুষার গলে তারপরে তা জমে শক্ত ভূত্বকে পরিণত হচ্ছে, যা ভারী মেরু ভালুকেরা পদদলিত করছে এবং তাদের পায়ে ভয়ঙ্কর ক্ষত তৈরি হচ্ছে। এমন ঘটনার কথা জানা গেছে একটি নতুন সমীক্ষার প্রতিবেদনে। ঘটনাটি কিছু ক্ষেত্রে এতটাই গুরুতর যে খাবার থালার আকারের বরফের বল মেরু ভাল্লুকের পায়ে আটকে থাকছে। ভাল্লুকগুলো কার্যত পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে কারণ বরফের গোলার নীচে মাংসল থাবায় গভীর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ ঘটছে। ইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত এই অধ্যয়নে গবেষকরা জানিয়েছেন এমন ক্ষত ভাল্লুকদের মধ্যে আগে কখনই দেখা যায়নি। মেরু ভাল্লুকের পাঞ্জায় তুষার জমে পরে শক্ত চাঁই হয়ে যায় যার ব্যাস হতে পারে ১২ ইঞ্চি। গবেষকরা বলছেন উত্তর গ্রিনল্যান্ডের দুটি গোষ্ঠীর মেরু ভাল্লুকে প্রতি চারটির মধ্যে একটি ভাল্লুকের পায়ে বরফ জমার ফলে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আক্রান্ত ভাল্লুকগুলো বেশিরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, যারা দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণ করে এবং স্ত্রী বা শাবকের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি ভারী হয়। গবেষকরা ২০১২ থেকে ২০২২ সালে পূর্ব গ্রিনল্যান্ড এবং কেন বেসিনের মেরু ভালুকের সংখ্যা থেকে পরীক্ষা করে দেখেছেন কেন বেসিনের ৬১টি ভাল্লুকের মধ্যে ৩১টির পায়ে ক্ষত, ত্বকে ঘা, গায়ের রোম পড়ে গেছে এবং পায়ের মাংসল থাবায় বরফ জমা হয়েছে। গবেষণা অনুসারে ২০১২ ও ২০১৩ সালে এই সংখ্যার ৭৩% প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ প্রভাবিত হয়েছিল। পূর্ব গ্রিনল্যান্ডে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে, ১২৪ টির মধ্যে ১৫টি মেরু ভাল্লুকে একই রকম আঘাত দেখা গেছে। গবেষকরা ক্ষতগুলোর জন্য বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা প্রস্তাব করেছেন এবং সম্ভাব্য কারণ শনাক্ত করতে আদিবাসী শিকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আর্কটিকের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে বরফ জমা এবং ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, উষ্ণ ও শীতল তাপমাত্রার চক্রের ফলে ভঙ্গুর বরফ তৈরি হচ্ছে যার ফলে মেরু ভালুকের পা কেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। গবেষকদের মতে ঘটনাটি বেশ আশঙ্কাজনক। যদি এমন পরিস্থিতি একটি বড়ো অঞ্চল জুড়ে খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে ওঠে, তবে আরও ভালুক আক্রান্ত হতে পারে।
Image credit: Kristin Laidre/University of Washington