জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম প্রাণী আধিপত্য বিস্তার করবে

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম প্রাণী আধিপত্য বিস্তার করবে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ আগষ্ট, ২০২৪
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম প্রাণী

বিশ্বের মহাসাগরগুলো আণুবীক্ষণিক জীবের আবাসস্থল। এদের খালি চোখে দেখা যায়না। প্রোক্যারিওটস নামে পরিচিত এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো মহাসাগরের প্রাণীদের ৩০% জুড়ে রয়েছে। এই জীব সমুদ্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখায় যে এই ভারসাম্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রোক্যারিওটদের উপর প্রায় নেই- তার ফলে সামুদ্রিক পরিবেশে এরা আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। এর ফলে মাছের প্রাপ্যতা হ্রাস পেতে পারে, বাধা পেতে পারে সমুদ্রের কার্বন শোষণ ক্ষমতা। ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া নামের এককোশী জীব প্রোক্যারিওটের অন্তর্গত। এই জীবগুলো পৃথিবীর প্রাচীনতম এক কোশী জীব বলে মনে করা হয়। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এদের বাস— স্থলে-জলে, ক্রান্তীয় থেকে মেরুঅঞ্চল পর্যন্ত। আকারে অতি ক্ষুদ্র হলেও প্রচুর পরিমাণে এদের পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী, প্রতিটি মানুষ পিছু প্রায় দু টন সামুদ্রিক প্রোক্যারিওট রয়েছে। খাদ্য শৃঙ্খলে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাছের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। আর পরবর্তী ক্ষেত্রে এই মাছ মানুষ খায়। সামুদ্রিক প্রোক্যারিওট অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়–এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়। প্রকৃতপক্ষে, সমুদ্রের ২০০ মিটার গভীরতায় থাকা প্রোক্যারিওট বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন টন কার্বন উত্পাদন করে যা মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ। এই বিশাল পরিমাণ কার্বন আউটপুটের ভারসাম্য রাখে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। এই ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সূর্যালোক এবং কার্বন ডাই অক্সাইডকে শক্তিতে পরিণত করে। অন্যদিকে মানুষ প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে যে কার্বন নির্গত করে তার এক-তৃতীয়াংশ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং অন্যান্য মহাসাগরীয় প্রক্রিয়াগুলো শোষণ করে। ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নের গতি সীমিত করতে সাহায্য করে। গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেন কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন সামুদ্রিক প্রোক্যারিওটের “বায়োমাস”-কে প্রভাবিত করবে। তারা দেখেন সমুদ্রের উষ্ণতার প্রতি ডিগ্রি বৃদ্ধির জন্য, তাদের বায়োমাস প্রায় ১.৫% হ্রাস পাবে। প্ল্যাঙ্কটন, মাছ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে ৩-৫% কমতে পারে। অর্থাৎ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে প্রোক্যারিওটরা আধিপত্য বিস্তার করবে মাছেদের সংখ্যা কমবে। উষ্ণায়ন বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের মহাসাগরের পৃষ্ঠতল থেকে ২০০ মিটার অবধি প্রোক্যারিওট প্রতি বছর অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন টন কার্বন উত্পাদন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ পৃথিবীর মহাসাগর ১°C থেকে ৩°C পর্যন্ত উষ্ণ হতে পারে। যদি প্রোক্যারিওটস দ্বারা উত্পাদিত কার্বনের পরিমাণ পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃদ্ধি পায় তবে সমুদ্রের কার্বন শোষণ ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাছাড়াও সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খল পরিবর্তিত হবে। মাছের সংখ্যা হ্রাস বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি বড়ো সমস্যার সৃষ্টি করবে কারণ মহাসাগরগুলো প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষের জন্য প্রোটিনের প্রধান উত্স। তবে গবেষকদের মতে প্রোক্যারিওট কত দ্রুত নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে সে বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন যদিও পূর্বের গবেষণা থেকে জানা যায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্যাকটেরিয়া নতুন বৈশিষ্ট্য বিকাশ করতে পারে যা তাদের বেঁচে থাকা আরও সহজ করে তোলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + 7 =