জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমালয়ের ট্রিলাইন আরও উপরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমালয়ের ট্রিলাইন আরও উপরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের আবহে এখন প্রতিরোধের পাশাপাশি অভিযোজনের তত্ত্বটিও বহুল চর্চিত। সমগ্র প্রাণীকুলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন চলেছে উদ্ভিদ জগতও। হিমালয় পর্বতমালা এবং হেংডুয়ান অঞ্চলের আলপাইন গাছের মতো পার্বত্য অঞ্চলের গাছগুলো এখন পাহাড়ের পাদদেশ ছেড়ে ধীরে ধীরে পর্বতচূড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণটা অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতার প্রভাবে। হিমালয় পর্বতমালায় ২৯০০ থেকে প্রায় ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় এই গাছগুলো দেখা যায়। যেহেতু এই অঞ্চলে বনের ছোটো বড়ো গাছপালা কম, আলপাইন গাছ এবং সেইসাথে নিম্ন উচ্চতার গাছগুলো তুলনামূলকভাবে কঠোর পরিবেশগত অবস্থার সংস্পর্শে আসে, যার ফলে এই গাছেদের বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে ওঠে। গবেষণায় দেখা গেছে যে হিমালয় অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠান্ডা দিনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বেড়ে যাচ্ছে উষ্ণ দিন, ফলত সেখানকার জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রে।
বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে, যে উচ্চতায় পার্বত্য গাছগুলো আগে ছিল তার থেকে তারা উঁচুতে উঠে যাচ্ছে। চিনের শেনঝেনের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ২৪৩টি পার্বত্য অঞ্চল জুড়ে যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় গাছেদের দেখা যাচ্ছে (ট্রিলাইন) তা চিহ্নিত করে দেখেছে যে ৭০% ক্ষেত্রে পর্বতের গাছেদের আরও চড়াই এলাকায় দেখা যাচ্ছে। ট্রিলাইন প্রতি বছর গড়ে ১.২ মিটার বা ৪ ফুট উঁচুতে ওঠে কিন্তু গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে উচ্চতায় ওঠা সবচেয়ে বেশি- বছরে গড়ে ৩.১ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমস্ত অঞ্চলে এই পরিবর্তনের হার ত্বরান্বিত হচ্ছে। ব্রায়োফাইট এবং লাইকেন জাতীয় গাছ অপেক্ষাকৃত বেশি উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায় ফলে আল্পাইন গাছের ঊর্ধ্বগামী অগ্রগতির কারণে তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। চাওলার মতে, তারা আলো এবং অন্যান্য সম্পদের জন্য বর্ধিত প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়। এই সব এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি তরান্বিত হয় এবং নিম্ন উচ্চতা থেকে আরও প্রতিযোগিতামূলক প্রজাতির গাছ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। গবেষকদের মতে এই অগ্রসরের ফলে এলাকায় পুষ্টি উপাদান, pH, এবং আর্দ্রতার মতো মৃত্তিকাসংক্রান্ত অন্যান্য কারণের উপর প্রভাব পড়ে যা আবার কম উচ্চতায় উদ্ভিদের গঠন এবং প্রাচুর্যকে প্রভাবিত করে৷ যেহেতু আল্পাইন বনভূমির এই অগ্রসর সেখানকার মাটির জল শোষণ এবং ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে, এর ফলে ঝরণার এবং জলধারার প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। বিষয়টি সেই সব এলাকায় উদ্বেগের কারণ হতে পারে যেখানে জলের প্রাপ্যতা ইতিমধ্যেই দুষ্প্রাপ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + eleven =