জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক

জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ জানুয়ারী, ২০২৫

সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির ফলে বিশ্বব্যাপী শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর ক্রমবর্ধমানভাবে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত অধ্যয়ন পত্রে, আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি আমাদের পৃথিবী তথা শিশুদের স্বাস্থ্য প্রভাবিত করছে। জানা গেছে ১৯৭০ সাল থেকে সারা বিশ্বে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৬৯% হ্রাস পেয়েছে। এই ক্ষতি জলবায়ুর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, ফলস্বরূপ, শিশুদের উপরও এর প্রভাব পড়ছে। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কীভাবে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে- এই পর্যালোচনায় গবেষকরা তার একাধিক পথ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জীবাণু বৈচিত্র্য হ্রাস, পৃথিবীতে গাছপালা সবুজ ক্ষেত্র কমে যাওয়া, তাপপ্রবাহের ঝুঁকি বৃদ্ধি, বন্যা, জীবাণুর সংক্রমণ এবং বায়ু দূষণ। পূর্ববর্তী গবেষণা বলছে, আমাদের বাস্তুতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের মতো বিভিন্ন ধরনের অণুজীব আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন জীবাণুর সংস্পর্শে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, অ্যালার্জি এবং প্রদাহজনিত ব্যাধির প্রকোপ হ্রাস পায়। আর এই জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে- এমন কথাই জানিয়েছে এই অধ্যয়ন।
অন্যদিকে, সবুজের সংস্পর্শে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তাদের বোধবুদ্ধির বিকাশ উন্নত হয়। ২৯৬টি গবেষণা থেকে জানা যায় প্রকৃতির সংস্পর্শে এলে শিশুদের মনোযোগ, মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে, বিশেষ করে সেইসব শিশুদের যাদের মনোযোগে ঘাটতি রয়েছে বা যারা অতি-সক্রিয়তা বা হাইপারঅ্যাক্টিভ ডিজওর্ডারে ভুগছে অথবা মানসিক উদ্বেগের শিকার। তাছাড়াও সবুজের সান্নিধ্যে শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত হয়, শ্বাসকষ্ট এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো ব্যাধির উপশম ঘটে। শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয় খেলার মাঠ বা পার্কের অভাবে শিশুদের মধ্যে স্থূলতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা দেখা যায়, তার সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ঘটে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং বন্যা শিশুদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে প্রায় ৮২ কোটি শিশু তাপপ্রবাহের তীব্র সংস্পর্শে আসে, ফলে তাপের কারণে স্ট্রোক, জলশূন্যতা এমনকি শিখনের ক্ষেত্রেও তাদের অসুবিধার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। শিশুদের মধ্যে প্রচণ্ড তাপের প্রভাব তাদের জন্মের আগেই পড়তে পারে, যার ফলে সময়ের আগেই শিশু জন্মের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সদ্যজাত শিশুদের ওজনও কম হচ্ছে। বন্যা স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশ্বব্যাপী ২৪ কোটি শিশু উপকূলীয় বন্যার আওতায় রয়েছে। এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় জলবাহিত রোগ এবং অপুষ্টির ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে সারা বিশ্বে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো ভেক্টর-বাহিত রোগের ভৌগোলিক পরিধি বেড়ে গেছে। প্রায় ৬০ কোটি শিশুর এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যেহেতু প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাই তাদের সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি।
জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির সঙ্গে বায়ু দূষণ জড়িত। বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী ২০০ কোটি শিশুদের প্রভাবিত করে। দূষণের ফলে শিশুরা হাঁপানির মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বার্ষিক ১.৫ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু ঘটে বায়ু এবং জল দূষণের কারণে।২০২৩ সালে, জাতিসংঘের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিটি পুনরায় বলে যে একটি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের অধিকার, তাই শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − three =