জলের কৈশিক তরঙ্গ

জলের কৈশিক তরঙ্গ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

জলভরা খোঁদলে বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে যে-ছোটো ছোটো ঢেউ ওঠে তাকে বলে কৈশিক (ক্যাপিলারি) তরঙ্গ। ক্যাপিলারি মানে চুলের মতো সরু। ফিনল্যান্ডের আল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের গবেষকরা এই কৈশিক (ক্যাপিলারি) তরঙ্গর নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার কমিউনিকেশন্‌স পত্রিকায়। হেইক্কি নিয়েমিনেন এবং রবিন রস-এর পরিচালনায় বহু বিষয়-সমন্বিত একটি গবেষক দল পদ্মপাতার আদলে এক কৃত্রিম পৃষ্ঠতল তৈরি করে তরঙ্গের কিছু নতুন পরিঘটনা সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন। সুপার-হাইড্রোফোবিক (অতি-জলাতঙ্কিত) পৃষ্ঠতল হল একটি চরম জল-নিরোধী পদার্থ। জলের মধ্যে এটি প্লাস্ট্রন নামক পদার্থকে ঠিক জায়গায় ধরে রাখে। প্লাস্ট্রন হল একটি গ্যাসের স্তর, যা মাত্র কয়েক মাইক্রোমিটার পুরু। এই প্লাস্ট্রন আবার সুপার-হাইড্রোফোবিক (অতি-জলাতঙ্কিত) পৃষ্ঠতলকে অবক্ষয় আর সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়। সব মিলিয়ে জল-গতি সংক্রান্ত অবস্থার উন্নতি হয়। এই ক্রিয়ার চরিত্র আরও ভালো করে অনুধাবন করবার জন্য গবেষকদের দলটি অতীব সুনির্দিষ্ট অতিশব্দর (আলট্রা সাউন্ড) প্রতি প্লাস্ট্রনদের যান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া কেমন তা নিয়ে অনুসন্ধান চালান। এই করতে গিয়ে তাঁরা ছোটো ছোটো ঢেউ সৃষ্টি করেন। এগুলির নাম দেওয়া হয় ‘প্লাস্ট্রন তরঙ্গ’। দেখা গেল, জলের মধ্য দিয়ে, সুপার-হাইড্রোফোবিক (অতি-জলাতঙ্কিত) পৃষ্ঠতল এবং গ্যাস-স্তর বেয়ে কৈশিক (ক্যাপিলারি) তরঙ্গ সচরাচর যে গতিতে চলে, এই প্লাস্ট্রন তরঙ্গগুলির গতি তার ৪৫ গুণ। এ এক রেকর্ড। কিন্তু এটা এই গবেষণার একটা অংশ মাত্র। আসল কাজটা হল ওই তরঙ্গদের কাজে লাগিয়ে প্লাস্ট্রনের সুস্থিরতার ওপর নজর রাখা ও নিয়ন্ত্রণ করা। সুপার-হাইড্রোফোবিক (অতি-জলাতঙ্কিত) পৃষ্ঠতলের মাথায় অবস্থিত সূক্ষ্ম গ্যাস-স্তরটিকে বজায় রাখার কাজটি যতখানি জরুরি, ঠিক ততখানিই সমস্যাসংকুল। প্লাস্ট্রন সুস্থিরতাকে কাজে লাগিয়েই সুপার-হাইড্রোফোবিক (অতি-জলাতঙ্কিত) ক্রিয়া, তরলে নিমগ্ন নানান ব্যবহারিক প্রয়োগক্রিয়ার নতুন নতুন দিক খুলে দিতে পারে। যেমন যন্ত্রপাতির আয়ু বাড়ানো, উৎপাদন-শিল্প এবং বায়ো-মেডিকাল প্রতিপার্শ্বের ক্রিয়াকর্মকে আরও নিপুণ করে তোলা। এই নতুন প্রকৌশলটি এমন এক সরঞ্জাম যার সাহায্যে আগের তুলনায় নিপুণভাবে গ্যাস-স্তরের সুস্থিরতা বজায় রাখা যাবে। একথা জানিয়েছেন ডক্টরেট-উত্তর গবেষক ম্যাক্সিম ফোকোনিয়ের, যিনি এই পরীক্ষাটি সম্পাদন করেছেন। মৌলিক স্তরের বিজ্ঞানে তো বটেই, সম্ভবত বায়োটেকনোলজি এবং মেটিরিয়ালস বিজ্ঞানেও এর প্রয়োগ ঘটবে। তিনি জানিয়েছেন , সময়ের সাপেক্ষে তরঙ্গগুলির গতিবৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে বোঝা গেছে, প্লাস্ট্রন কীভাবে বদলায় এবং কীভাবে ক্রমে জলের মধ্যে গলে যায় সেটা পরিমাপ করা সম্ভব। ভেষজবিদ্যা ও কোশ-প্রযুক্তি প্রমুখ বিভিন্ন প্রয়োগক্ষেত্রে এটিকে সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এ গবেষণার অর্থ জুগিয়েছেন ফিনল্যান্ডের গবেষণা পরিষদ, ফিনিশ সংস্কৃতি পরিষদ, এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের হরাইজন গবেষণা ও উদ্ভাবনশীলতা কর্মসূচি।
সূত্র : Aalto University. “Record-speed waves on extremely water-repellent surfaces.” ScienceDaily. ScienceDaily, 13 February 2025.

http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/02/250213144449.htm>.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 5 =