জাপানের তৃতীয় পূর্বপ্রজন্ম

জাপানের তৃতীয় পূর্বপ্রজন্ম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ মার্চ, ২০২৫

‘জনসমষ্টি জেনেটিক্স’ জনসংখ্যার মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য ও পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এটি বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমান আলোচনার বিষয় জাপান। এতদিন ধরে মনে করা হত, জাপানের মানুষের জন্ম দুটি মূল পূর্বপ্রজন্ম শাখা থেকে।তবে, সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, জাপানি লোকদের পূর্বপ্রজন্মের বিষয়টি এই ধারণার চেয়ে বেশি জটিল। সেখানে একটি তৃতীয় আদিসূত্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই গবেষণায় হাজার হাজার মানুষের ডিএনএ নমুনা ও ক্লিনিক্যাল তথ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। গবেষকরা জানান, আগে শুধু জোমন ও চাল চাষী আগন্তুকদের দুটি শাখা হিসেবে দেখা হতো। তবে পূর্ব-পূর্বাঞ্চলীয় এশিয়ার একটি তৃতীয় গোষ্ঠীও আছে, যাদের নাম ইমিশি। “আমাদের বিশ্লেষণ জাপানের জনসমষ্টির কাঠামোকে সঠিকভাবে তুলে ধরেছে”। গবেষকরা ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন। নতুন গবেষণার লক্ষ্য হলো এই প্রাচীন গোষ্ঠীগুলি কীভাবে জাপানের দ্বীপগুলিতে ছড়িয়েছে, তা বোঝা। জাপানের জিনোম/এক্সোম সিকোয়েন্সিং লাইব্রেরি জিনগত তথ্যকে চিকিৎসা ও পারিবারিক তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছে। গবেষকরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য ও পূর্বপ্রজন্মের তথ্য নিয়ে কাজ করছেন, যা বিভিন্ন অঞ্চলে নির্দিষ্ট রোগের প্রভাব বোঝার কাজে লাগতে পারে। তারা বলেন, “আমরা প্রমাণ করেছি যে দুর্লভ, প্রকারভেদগুলি কখনও কখনও নির্দিষ্ট পূর্বপ্রজন্ম থেকে আসে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৮.৫% নমুনায় জোমন পূর্বপ্রজন্মের প্রভাব ওকিনাওয়ায় সবচেয়ে বেশি, কিন্তু পশ্চিম জাপানে তা ১৩.৪%। এই অংশের মানুষ, হান চীনা গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এখানে ২৫০ থেকে ৭৯৪ সালের মধ্যে পূর্ব এশিয়া থেকে আগন্তুকদের প্রবাহের তথ্য প্রামাণ্য হতে পারে। ইমিশি-সম্পর্কিত বংশধররা উত্তর-পূর্বে বেশি শক্তিশালী, এবং পশ্চিম দিকে যত এগোনো হয়েছে, তত তাদের সংখ্যা কমেছে। এই গবেষণাটি কেবল পূর্বপ্রজন্মের ধারাই নয়, দুর্লভ জিনের প্রকার সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করেছে। PTPRD নামক একটি জিনের প্রকার উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ এবং হার্টের সমস্যায় বেশি ভোগে। এছাড়া GJB2 এবং ABCC2 জিনেরও উল্লেখযোগ্য প্রকারভেদ রয়েছে, যা শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং যকৃৎ ঘটিত রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ডিএনএ গবেষণা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নতুন ধারণা দিতে পারে। এই প্রকল্পটি প্রাচীন মানব গোষ্ঠী নিয়ান্ডায়ারথাল এবং ডেনিসোভ্যানসের ডিএনএও পরীক্ষা করছে।

গবেষকরা বলেন, “আমরা জানতে চাই প্রাচীন জিনোমগুলি আধুনিক মানব ডিএনএতে কেন যুক্ত হয়”। গবেষক দলটি জাপানি জনগণের মধ্যে ৪৪টি প্রাচীন ডিএনএ অঞ্চল খুঁজে পেয়েছে। পূর্ব এশীয়দের মধ্যে কিছু অনন্য ডিএনএ অঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে একটি ডেনিসোভ্যান-উদ্ভূত খণ্ড রয়েছে, যা সেমাগ্লুটাইড ঔষধের প্রতি প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রাপ্ত আরও ১১টি নিয়াণ্ডার্থাল-উদ্ভূত খণ্ড বিভিন্ন রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যান্য গবেষকরা দেখিয়েছেন, প্রাচীন ডিএনএ কখনও কখনও কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার সুবিধা দেয়। প্রাচীন জিন ও আধুনিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে, রোগ ও সংবেদনশীলতা কীভাবে উদ্ভূত হয়, তা বুঝতে সাহায্য করছে এই গবেষণা। বড় পরিসরের জিন-তদন্ত মূলত ইউরোপীয় নমুনার উপরই বেশি হয়েছে। জাপানের গবেষকরা এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আরও ডিএনএ অন্তর্ভুক্ত করতে JEWEL-এর বিস্তার বাড়াতে চান। তারা জনসমষ্টির পার্থক্যগুলিকে জিনগত পার্থক্যগুলির সঙ্গে যুক্ত করতে চান। এটি বিশেষ বিশেষ সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে পারে, কোন জিনবিভেদগুলি সবচেয়ে প্রভাবশালী তা দেখাতে পারে। তবে আপাতত এটুকু জানা গেছে যে জাপানে তিনটি পূর্বপ্রজন্ম গোষ্ঠীর অস্তিত্ব অনস্বীকার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 4 =