জাপান পারমাণবিক শক্তিতে ফিরছে

জাপান পারমাণবিক শক্তিতে ফিরছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ জুলাই, ২০২৫

২০১১ সালের বিধ্বংসী ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার ১৪ বছর পর জাপানের আবার পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে গ্যাসের দাম বাড়ার পাশাপাশি এআই ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ায় জাপান তার জ্বালানি নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। বন্ধ হয়ে থাকা ৫৪টি পারমাণবিক চুল্লির মধ্যে ইতিমধ্যে ১৪টি আবার চালু করা হয়েছে এবং বাকিগুলোরও চালু করার প্রক্রিয়া চলছে।কোম্পানির নির্বাহী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে পুনরায় চালু করার পর্বটি কমপক্ষে ২০৩০ অবধি স্থায়ী হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সেই কারণে দেশের শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য জাপান সরকার এখন পুরনো চুল্লিগুলো আবার চালু করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নতুন চুল্লিগুলো নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হবে। উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যাস-শীতলিত রিঅ্যাক্টর, উন্নত লঘু জল রিঅ্যাক্টর, ছোটো মডুলার রিঅ্যাক্টর, দ্রুত নিউট্রন রিঅ্যাক্টর এবং পারমাণবিক ফিউশন এর অন্তর্ভুক্ত।
জাপান তার ২০৪০ সালের শক্তি পরিকল্পনায় পরমাণু শক্তি সীমিত করার বদলে আরও বেশি করে ব্যবহার করার কথা ঘোষণা করেছে। বর্তমানে পারমাণবিক শক্তি জাপানের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮.৫% জোগান দিচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে একে ২০%-এ উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

তবে সমাজের মধ্যে এখনো নিরাপত্তা এবং ফুকুশিমার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। জাপান ফেডারেশন অব বার অ্যাসোসিয়েশনস এই নীতির বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি, নবায়নযোগ্য শক্তির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ডিকার্বোনাইজেশন অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য কার্বন গ্যাস নিঃসরণ কমানো বা বন্ধ করা। সেক্ষেত্রে ছোটো মডুলার রিঅ্যাক্টরগুলি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে। কারণ এই চুল্লিগুলি পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে পরিবেশ সুরক্ষায় সাহায্য করে।
তবে ছোটো মডুলার রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তি নিয়ে জাপানে এখনও সচেতনতা কম। ফলে ২০৪০ সালের আগে এ প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়া কঠিন । এ কারণে জাপানি কোম্পানিগুলো বিদেশে এই ছোটো মডুলার রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে, যেমন- যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রকল্পগুলোতে। উদ্দেশ্য হল, বৈদেশিক সফলতার পর প্রযুক্তি নিজের দেশে আনা ।

সব মিলিয়ে, জাপান ধীরে ধীরে পারমাণবিক শক্তিকে আবার গ্রহণ করছে। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর এই পরিবর্তনের সাফল্য নির্ভর করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 7 =