জাহাজ দুর্ঘটনায় বিপন্ন পরিবেশ

জাহাজ দুর্ঘটনায় বিপন্ন পরিবেশ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ মার্চ, ২০২৫

নর্থ সি-তে সোমবার (১০ তারিখ ) সকালে একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার ও একটি রাসায়নিকবাহী জাহাজের সংঘর্ষের পর এখনও আগুন জ্বলছে।একজন নাবিক এখনও নিখোঁজ। দীর্ঘ সময় ধরে খোঁজার পর অনুসন্ধান বন্ধ রাখা হয়েছে । উপকূল রক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, স্টেনা ইম্যাকুলেট নামের মার্কিন জাহাজটি মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য জ্বালানি বহন করছিল।
অন্যদিকে, সোলং নামে পর্তুগিজ জাহাজটি বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ে চলছিল। উপকূল রক্ষক কমান্ডার ম্যাথিউ অ্যাটকিনসন জানান, এ পর্যন্ত ৩৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । নিখোঁজ ব্যক্তি সোলং জাহাজের নাবিক। তেলবাহী জাহাজের এক ব্যক্তি জানান সোলং নামের জাহাজটি হঠাৎ এসে স্টেনা ইম্যাকুলেট-এর সঙ্গে ধাক্কা খায়। জাহাজের কর্মীরা দ্রুত নিরাপত্তার জন্য হাতের কাছে যা যা ছিল তাই সঙ্গে নিয়ে ছোট নৌকায় উঠে পড়েন। এদিকে হাম্বার মোহনার কাছে কিছু জেট জ্বালানি সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিচালনাকারী কোম্পানি জানায় ধাক্কার ফলে জাহাজের একটি ট্যাংক ফেটে গিয়ে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে।একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এই ট্যাংকারটি সেনাবাহিনীর জন্য জেট বিমানের জ্বালানি বহন করছিল। তবে এই দুর্ঘটনার ফলে সেনাবাহিনীর কাজ বা প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হবে না। একটি উপকূল রক্ষী হেলিকপ্টার, চারটি লাইফবোট এবং আশপাশের কিছু অগ্নিনির্বাপক জাহাজ উদ্ধারকাজে পাঠানো হয়েছে।
স্ভিটজার কোম্পানির প্রধান মাইকেল প্যাটারসন জানান, তাদের দল আগুন নেভানোর কাজের জন্য চারটি নৌকা পাঠিয়েছে ।তিনি বলেন, তেল ও জেট বিমানের জ্বালানি খুবই বিপজ্জনক, কারণ এগুলোতে সহজেই আগুন ধরে ও বিষাক্ত ধোঁয়া বের হয় । তাঁর মতে তাঁর দেখা ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে এটি একটি । সমুদ্র দুর্ঘটনার তদন্তকারী দল প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে তথ্য সংগ্রহ করছে। নৌসেনার প্রধান অ্যাটকিনসন জানান, দূষণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উদ্ধারকাজ ও বীমা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধিরা কাজ করছেন। পরিবহন সচিব, উপকূল রক্ষক , আরএনএলআই এবং জরুরি সেবাদলের প্রশংসা করেছেন। সামুদ্রিক যান চলাচল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্টেনা ইম্যাকুলেট জাহাজটি গ্রিসের আগিওই থিওডোরোই বন্দর থেকে এসে হাম্বার মোহনায় নোঙর ফেলেছিল। আর সোলং জাহাজটি স্কটল্যান্ডের গ্র্যাংমাউথ বন্দর থেকে বেরিয়ে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম যাচ্ছিল।ধাক্কা লাগার সময় পণ্যবাহী জাহাজটিতে সোডিয়াম সায়ানাইড নামক মারাত্মক বিপজ্জনক রাসায়নিকের ১৫টি বাক্স ছিল । সোডিয়াম সায়ানাইড ধাতু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রঙ তৈরিতে ব্যবহার হয়। এই বিষাক্ত পদার্থটি জলে সহজেই মিশে গিয়ে শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। এখনও নিশ্চিত নয় যে পণ্যবাহী জাহাজটি থেকে কোনো সোডিয়াম সায়ানাইড সমুদ্রে ছড়িয়েছে কিনা।পরিবেশবিদ অ্যালাস্টার হে জানিয়েছেন এটি জলের সংস্পর্শে এলে হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস তৈরি হতে পারে, যা উদ্ধারকাজে থাকা লোকদের বিপদ ডেকে আনতে পারে । ক্রাউলি জানিয়েছেন, স্টেনা ইম্যাকুলেট জাহাজটি থেকে ধাক্কা খেয়ে জেট জ্বালানি ধীরে ধীরে বাতাসে মিশে গেলে বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়বে। আবার এটি জলে পড়লে সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।গ্রীনপিস সংস্থা জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনার ফলে বিভিন্ন বিষ-জনিত বিপদের আশঙ্কা আছে, যা নিয়ে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, এখনো দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ পুরোপুরি জানা যায়নি।প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, “এই ঘটনা খুবই গুরুতর ও উদ্বেগজনক। পরিবহন বিভাগ উপকূল রক্ষীদের সাথে কাজ করছে, যাতে দ্রুত সহায়তা দেওয়া যায়।” পিঅ্যান্ডও
ফেরি জানিয়েছেন হাম্বার মোহনা দিয়ে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং হাল এবং রটারডাম থেকে জাহাজ ছাড়ার সময় সোমবার (১০ তারিখ) সন্ধ্যায় অনিশ্চিত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 3 =