জিনপরিবর্তিত শুয়োর থেকে মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপন- প্রথম গ্রহিতার মৃত্যু- স্বপ্ন বেঁচে থাকে

জিনপরিবর্তিত শুয়োর থেকে মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপন- প্রথম গ্রহিতার মৃত্যু- স্বপ্ন বেঁচে থাকে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ মে, ২০২৪

পৃথিবীর প্রথম জিন পরিবর্তিত শুয়োর থেকে মানুষের প্রতিস্থাপিত কিডনির গ্রহীতা রিচার্ড স্লেম্যান প্রয়াত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ৯ই মে, প্রতিস্থাপনের দুমাসের মাথায়। মার্চ মাসের ১৯ তারিখ আমেরিকার বস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম সফল পশু থেকে মানুষের প্রতিস্থাপিত কিডনির অপারেশন। রিক স্লেম্যান হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন অপারেশনের দুসপ্তাহ পরে। সাড়া পড়ে ছিল বিশ্বজোড়া। প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের অভাবের মুখে এই নতুন প্রযুক্তিগত সাফল্যের আনন্দে মশগুল হয়েছিল বিজ্ঞানী সমাজ এবং সেই শত সহস্র রোগীরা, যারা ফিবছর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আশায় নাম লিখিয়ে বসে থাকেন। যতজন প্রয়োজনমাফিক মস্তিষ্কমৃত ব্যক্তির থেকে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ পেতে শেষমেষ সফল হন, আর যতজনের তার প্রয়োজন- এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক প্রায় দশভাগের একভাগ। চাতকের মত অঙ্গের লাইনে দাঁড়িয়েই মৃত্যু হয় প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের। কিডনি ছাড়াও লিভার হার্ট-এর ক্ষেত্রেও একই চিত্র। তাই আশা জেগেছিল যে, মনুষ্যেতর প্রাণীর থেকে নেওয়া অঙ্গ সফলভাবে যদি মানুষকে দেওয়া যায় তাহলে সমস্যাটির সুরাহা হবে।

অন্য পশুর অঙ্গ মানুষের দেহ গ্রহণ করেনা ইমিউনিটির প্রভাবেই। মানুষের শরীর বাইরের থেকে আসা, যে কোন জিনিসকে প্রত্যাখ্যান করে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনে তাই মানুষের থেকে মানুষের হলেও ইমিউনিটিকে দুর্বল করে এমন ওষুধ গ্রহীতাকে জীবনভর খেয়ে যেতে হয়। শুয়োর থেকে মানুষের প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ নির্মাণে বিজ্ঞানীদের তাই সেই ইমিউনিটিকে বাগে আনার জন্য যথেষ্ট কসরত করতে হয়েছিল। ‘ই-জেনেসিস’ বলে একটি বায়োটেক কোম্পানী এই কাজটি করেছিল। তারা শুয়োরের কিডনির থেকে এমন তিনটি জিন সরিয়ে দিয়েছিল জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে, যেগুলো দাতার থেকে গ্রহীতার অঙ্গ নেওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে জোরদার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। পাশাপাশি মানুষের শরীরের সাথে মিল হওয়া আরো সাতটি জিন শুয়োরের জিনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সবমিলিয়ে চেষ্টা করা হয়েছিল যেন প্রতিস্থাপিত অঙ্গটি গ্রহিতা ঝামেলাবিহিন ভাবে গ্রহণ করতে পারে।

জিন প্রযুক্তিতে পরিবর্তিত শুয়োর থেকে অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন এর আগে হয়েছে। আমেরিকাতেই এর আগে একইভাবে প্রতিস্থাপিত দুটি হার্টের ক্ষেত্রেও এই বাধার সামনে পড়তে হয়েছিল এবং রোগীরা বেঁচে ছিলেন দুসপ্তাহ। রিক স্লেম্যান বেঁচে ছিলেন দুমাস। এখনও পরিষ্কার নয় কেন স্লেম্যানের মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু এই ধরনের ব্যর্থতাগুলো সিঁড়ি তৈরির সময় ঘটতেই থাকে। এভারেস্টে হিলারী-নোরগে চড়ার আগে কতজন হারিয়ে গেছিলেন তার ইয়ত্তা নেই। আমাদের কল্পনা চাওলাও তো হারিয়ে গেছেন মহাকাশে। তবুও মানুষ কঠিন জেনেও ও পথে হাঁটছে। কারণ মানুষের স্বভাব সেটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =