
এমন কিছু জিন থাকে যাদের কেবল বেঁচে থাকার তাড়নাটুকুই আছে, উপকারের বালাই নেই ! এই জিনগুলিকে ‘স্বার্থপর’ জিনও বলা হয়ে থাকে। কখনও কখনও এগুলি আবার ক্ষতিকর বা প্রাণঘাতী হতে পারে। এই স্বার্থপর জিনগুলির অনিষ্টকর দিকগুলি জানাই হল স্টাওয়ার্স ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চের একটি নতুন গবেষণার উপজীব্য । ফিশন ইস্ট নামক একটি একক-কোষের জীবকেই এই গবেষণার জন্য কাজে লাগান সারা জ্যান্ডার্স এবং র্যা ন্ডাল হফম্যান। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন কিভাবে পরিবর্তনশীল স্বার্থপর জিনগোষ্ঠীর কার্যকারিতা কোষের ক্ষতি করে। প্লস জেনেটিক্স পত্রিকায় প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যায়, স্বার্থপর জিনগুলির দীর্ঘমেয়াদী বিবর্তনীয় সাফল্যের জন্য দ্রুত বিবর্তন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাঝে মাঝে এটি তাদের আত্মবিনাশের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। স্বার্থপর জিনগুলি প্রজননের সময় তাদের নিজস্ব সঞ্চালনকে নির্দেশিত করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক শ্রেণীটিকে বলা হয় কিলার মেওটিক ড্রাইভার। এরা বিষাক্ত প্রোটিন তৈরি করে প্রজনন কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। রক্ষা পায় কেবল সেইসব কোষ যারা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করে একটি প্রোটিন প্রতিষেধক। বর্তমানে, জ্যান্ডার্স ল্যাবের প্রাক-ডক্টরেট গবেষক অনন্যা শ্রীনিবাস নিদামঙ্গলার নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, শত শত কার্যকর স্বার্থপর জিন একই ধরণের আণবিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে কিনা এবং ক্রিয়াশীলতার জন্য প্রোটিনের কোন কোন বৈশিষ্ট্য প্রয়োজনীয়। দেখা গেছে, স্বার্থপর জিনের মারণক্ষমতা আসে তার তৈরি বিষাক্ত প্রোটিনগুলিকে সমষ্টিবদ্ধ করা বা গুচ্ছ গঠন করার প্রক্রিয়া থেকে। এক্ষেত্রে তাদের পালটা বিষনাশক দ্রব্যগুলিও গুচ্ছে গুচ্ছে একত্রিত হয়। বিকাশমান জনন কোষকে রক্ষা করতে গেলে বিষ আর তার প্রতিষেধক উভয় প্রোটিনকেই একত্রিত হতে হয়। আপনা থেকেই সমষ্টিবদ্ধ হওয়ার এইসব ধর্মগুলি বিষাক্ত গুচ্ছ গঠনে সক্ষম অন্যান্য প্রোটিনের ধর্মেরই সদৃশ। জ্যান্ডার্স বলেছেন, “যেসব প্রোটিন আপনা থেকেই গুচ্ছ বাঁধে, কোষের ক্ষেত্রে তারা নানান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; আবার একই সঙ্গে তারা আলজাইমারের মতো রোগেরও সৃষ্টি করে”। প্রোটিনের কোন কোন পর্যায়ক্রম সমষ্টিবদ্ধ হওয়ার অনুকূল, আর বিষাক্ত ও অ-বিষাক্ত গুচ্ছগুলির মধ্যে তফাত কী, সেটাই তাঁরা বুঝতে চাইছেন। হাফম্যান ল্যাবের তৈরি এক বিশেষ প্রযুক্তি আছে যা জীবন্ত কোষে প্রোটিন সমষ্টির পরিমাণ নির্ধারণ এবং বিশ্লেষণের কাজে গবেষকদের সাহায্য করে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে যাবতীয় কার্যকর স্বার্থপর জিনেরই রয়েছে বিষাক্ত প্রোটিনগুলির স্বয়ং-সমাবেশ ঘটানোর সক্ষমতা। অতঃপর কেন প্রোটিনগুলি বিষাক্ত হয় তা জানবার জন্য তাঁরা এমন সব পরিব্যক্ত বিষাক্ত প্রোটিন তৈরি করেন যা কোষের মধ্যে সমষ্টির আকার এবং তাদের বিস্তারের ব্যাপকতায় পরিবর্তন আনে। বৃহত্তর গুচ্ছগুলি ছোট গুচ্ছগুলির তুলনায় কম বিষাক্ত হয়। মারণক্ষমতা অর্জন করতে হলে এদের কোষের মধ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে হয়। তাঁদের গবেষণা থেকে এই জোরালো ইংগিত মিলেছে যে বিষাক্ত হয়ে ওঠার পিছনে আসল ঘটনা হল সমষ্টিগঠন আর প্রোটিনের নির্দিষ্ট অবস্থান। জানা গেছে, প্রতিষেধক প্রোটিনটি বিষ প্রোটিনের ডেলাগুলোকে কোষের আস্তাকুঁড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। পূর্বে, গবেষকরা ভেবেছিলেন যে বিষ আর বিষ-প্রতিষেধকের গুচ্ছটি কেবল এক বাঁধবার দড়ি হিসাবে কাজ করে। কিন্তু এখন তাঁরা দেখলেন, সমতা আনার জন্য দরকার বিষ আর বিষ-প্রতিষেধকের একটা সুনির্দিষ্ট উপ-সমাহার, যা সমষ্টির আকার বাড়াবে এবং তাকে আলাদা করবে। অর্থাৎ প্রোটিনগুলিকে কেবল এক জায়াগায় নিবদ্ধ করে ফেলাটাই যথেষ্ট নয়।
এই গবেষণাটি বিষাক্ততার অন্তর্লীন কারণ সম্বন্ধে একটি ক্রম-বিকাশমান ধারণাকে সত্য বলে প্রমাণ করল। সেটা এই যে কোষের মধ্যে একত্রিত সমষ্টির আকার ও বিস্তারণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে অন্তর্ঘাত আর অন্যদিকে পরিত্রাণ, এ দুয়ের গতিশীল আন্তঃক্রিয়া মারফত ইস্টের বিবর্তন-পথটি যেন চলচ্চিত্রের মতো করে ফুটে উঠেছে এ গবেষণায়।
সূত্র: PLOS Genetics, 2025; 21 (2): e1011534 DOI: 10.1371/journal
রান্ডাল হাফমান