জীববিজ্ঞানে কৃবুর কীর্তি

জীববিজ্ঞানে কৃবুর কীর্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

জীববিজ্ঞানের চিরাচরিত গবেষণা-পদ্ধতিগুলো খুবই কার্যকর, সন্দেহ নেই। কোশগুলি কীভাবে তাদের কাজ নিষ্পন্ন করে, কিংবা স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘ্যাত ঘটলে তারা কীভাবে সাড়া দেয়, তা ওইসব পদ্ধতি থেকে সুন্দরভাবে জানা যায়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, কোশগুলো কীভাবে কাজ করবে, পরিবর্তন ঘটলে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তার পূর্বাভাস ওইসব পদ্ধতি থেকে মেলে না। ইদানীং কৃবু (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)-কে কাজে লাগিয়ে এ ব্যাপারে সাফল্য অর্জন করা গেছে। গবেষণাটি করেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেজিলোস কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জন্‌স-এর গবেষকরা। সিস্টেমস বায়োলজির অধ্যাপক রাউল রাবাদান এ গবেষণার পরিচালক। তাঁকে সহায়তা করেছেন তাঁর ছাত্র শি ফু, আলেজান্দ্রো বুয়েন্দিয়া, এবং শেনতং মো। এই নতুন পদ্ধতিতে বিশেষ বিশেষ কোশের মধ্যে কোন কোন জিন সক্রিয় থাকবে তার পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচেষ্টা চলেছে। গবেষকরা বলছেন, এতদিন মূলত রুগ্ন, বিশেষত ক্যান্সারগ্রস্ত কোশ নিয়েই এই কাজ চলত, স্বাভাবিক সুস্থ কোশ নিয়ে নয়। এবার তাঁরা মানুষের কোটি কোটি স্বাভাবিক কোশ থেকে জিন-ক্রিয়া সংক্রান্ত উপাত্ত (ডেটা) নিয়ে একটি মেশিন লার্নিং মডেলকে প্রশিক্ষিত করে তুলেছেন। জিনোম সিকোয়েন্স, জিনোমের কোন কোন অংশের নাগাল পাওয়া যায়, জিনের ভিতরের তথ্য সংকেত কোন প্রক্রিয়ায় একটি ক্রিয়ায় পরিণত হয় – এইসব উপাত্ত ওই মডেলের মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। চ্যাটজিপিটি যেভাবে কাজ করে অনেকটা সেইভাবেই কাজ করে এই নতুন পদ্ধতি। চ্যাটজিপিটিকে যেসব উপাত্ত শেখানো হয় তার ভিত্তিতে সে ব্যাকরণের নিয়ম শিখে নিয়ে সেগুলোকে প্রয়োগ করে নতুন নতুন অজানা পরিস্থিতিতে। এ ক্ষেত্রেও তাই। কোশের বিভিন্ন দশার ক্রিয়াকর্মর ‘ব্যাকরণ’ শিখে নিয়ে এবার কোনো একটা নির্দিষ্ট দশায় সেইসব নিয়ম সে প্রয়োগ করে, সেটা রুগ্ন কোশ হতে পারে, আবার স্বাভাবিক কোশও হতে পরে। এখান থেকে যে তথ্য উঠে এল তার ভিত্তিতে যেসব পূর্বাভাস করা হবে সেগুলো কতটা মেলে তা এবার বিচার করা হবে। দেখা গেছে, ১ কোটি ৩০ লক্ষরও বেশি মনুষ্য-কোশের উপাত্তে প্রশিক্ষিত হওয়ার পর এই পদ্ধতি যথেষ্ট নিপুণভাবে আগে-অদেখা কোশের জিনক্রিয়ার পূর্বাভাস দিতে পারছে। এসব পূর্বাভাস পরীক্ষালব্ধ ফলের খুব কাছাকাছি। এটা খুবই উৎসাহজনক। ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যাপারে এই নতুন পদ্ধতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলেই মনে করছেন গবেষকরা। তবে ক্যান্সার ছাড়াও অন্য অনেক রোগ নির্ণয় ও সম্ভাব্য চিকিৎসার পথনির্দেশ করবে এই গবেষণা এবং এ ধরনের আরও অনেক গবেষণা। মুখ্য গবেষক অধ্যাপক রাবাদান-এর মতে, এর মধ্য দিয়ে জীববিজ্ঞানের এক নতুন যুগের সূচনা হল, যার সম্ভাবনা বিপুল। জীববিজ্ঞান এর দ্বারা এক ‘পূর্বাভাস দানে সক্ষম বিজ্ঞানে পরিণত হবে’।
সূত্রছ Columbia University Irving Medical Center. “New AI predicts inner workings of cells.” ScienceDaily, 8 January 2025.

http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250108143717.htm>.